দৈনিক শিক্ষাডটকম, মুরাদ মজুমদার: ‘জেলা শিক্ষা অফিসার, ময়মনসিংহ, রফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগে অতি উৎসাহী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলায় শিক্ষা অফিসার পদে তিন বছরের অধিক কর্মরত আছেন এবং জনসম্পৃক্ততা অতি মাত্রায়। ফলে, জনস্বার্থে তাকে অন্যত্র বদলি করা সমীচীন বলে তদন্ত কর্মকর্তারা দৃঢ়ভাবে মনে করে।’ এমন মন্তব্য ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির। ওই প্রতিবেদনের পর তিনি আরো চার বছর ময়মনসিংহেই স্বপদে বহাল ছিলেন। এখন ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ। সেই রফিকুল ইসলাম এখন কুমিল্লার জেলা শিক্ষা অফিসার। একই সঙ্গে উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে। কিন্তু এখানে কী তার থাকার কথা ছিলো? এমন প্রশ্ন শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।
শিক্ষাবিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তাকে রফিকুল ইসলামের অতীত কর্মকাণ্ডের তথ্য-প্রমাণ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে মন্ত্রণালয় রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করার সুনির্দিষ্ট ধারা উল্লেখসহ প্রস্তাব পাঠাতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়াও রফিকুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিররণী পাঠাতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু অধিদপ্তরের সরকারি মাধ্যমিক শাখার সিন্ডিকেটের কবলে ফাইল চাপা রয়েছে।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ মার্চ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত তাগিদপত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পৌঁছালেও অদ্যাবধি কোনো অগ্রগতি নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহের জেলা শিক্ষা অফিসার থাকাকালে নিয়োগ বাণিজ্যে লিপ্ত হন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্যমতে, ত্রিশাল উপজেলার কাটাখালী উমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ওঠা অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে।
ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রফিকুল ইসলামের অপরাপর সঙ্গীরা ছিলেন- তৎকালীন ত্রিশাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন।
জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ত্রিশাল উপজেলার কাটাখালী উমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষকে আহ্বায়ক করে দুই সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে এ তথ্য জানা যায়।
অভিযোগ ছিলো, রফিকুলের সিন্ডিকেট ওই স্কুলটির প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী গ্রন্থাগারিক ও নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগে বাণিজ্য করে আর্থিক লাভবান হয়েছেন।
নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিবাদে ম্যানেজিং কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। এ নিয়োগের সময় প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা চলমান ছিলো। জেলা প্রশাসকের সুপারিশ মানা হয়নি।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মার্চ আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান। মহাপরিচালক ওই প্রতিবেদনটি শিক্ষা সচিবকে পাঠান ওই বছরের ২২ আগস্ট।
প্রতিবেদনে জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলামের কাছে নিয়োগ, ম্যানেজিং কমিটিসহ কয়েকটি বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ জমা দিলেও তা তদন্ত না করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা দেয়া থাকলেও ওই পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ প্রমাণ পায় কমিটি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ম্যানেজিং কমিটির, পাঁচজন সদস্য পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগও প্রমাণিত।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির শূন্যপদ পূরণ না করে কমিটি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. আফাজ উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি ধানীখোলা ওসমানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক এবং শিক্ষা জীবনে দুইটি তৃতীয় বিভাগ রয়েছে। সভাপতির আপন চাচাতো ভাই তিনি। নিম্নমান সহকারী পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সভাপতির আপন ছোট ভাই শহীদুর রহমানকে। ম্যানেজিং কমিটি বাতিল ও কয়েকটি মামলা রয়েছে বিষয়ে ওই সময়ের ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের দেয়া নির্দেশও বাস্তবায়ন না করার অভিযোগও প্রমাণিত।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। আইন অনুযায়ী নিয়োগ কমিটিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার একজন প্রতিনিধি দিতে হয়, আমি সেটাই দিয়েছি। এখানে আমার কোনো হাত ছিলো না। এ বিষয়গুলো তদন্ত করে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন আপনার কাছে আছে কি না, প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই মুর্হূতে আমার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন নেই।
এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অবশ্যই পালন করতে হবে। সরকারি মাধ্যমিক শাখায় খোঁজ নিয়ে বিষয়টির অগ্রগতি জানবো।