সেই সেলিম খানের কাছ থেকে রাজস্ব বাবদ অর্থ আদায়ের নির্দেশ - দৈনিকশিক্ষা

সেই সেলিম খানের কাছ থেকে রাজস্ব বাবদ অর্থ আদায়ের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার ২১টি মৌজার মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য সেই সেলিম খানের কাছ থেকে রাজস্ব (রয়্যালটি) আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিশেষত চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে ওই নির্দেশনা এসেছে, ১৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

চাঁদপুর সদরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীর ডুবোচর থেকে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে বালু তুলেছেন। ফলে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে রিট আবেদনকারী (সেলিম খান) সরকারকে কোনো ধরনের রয়্যালটি না দিয়েই স্বেচ্ছাচারীভাবে ওই মৌজাগুলো থেকে বালু উত্তোলন করেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এতে সরকারের ইতিমধ্যে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।  

হাইকোর্ট বিভাগ যেদিন (২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল) রায় দিয়েছিলেন, সেদিন থেকে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে আপিল বিভাগ যেদিন (চলতি বছরের ৪ এপ্রিল) আদেশ দিয়েছিলেন—এই সময় পর্যন্ত সেলিম খানের কাছ থেকে ওই রয়্যালটি আদায় করতে বলা হয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে। অর্থাৎ বালু উত্তোলনের জন্য মো. সেলিম খানকে চার বছরের রয়্যালটি দিতে হবে।  

চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে সেলিম খানকে বালু উত্তোলনে অনুমতি দিতে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে ওই নির্দেশ রয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ গত ২৯ মে ওই রায় দেন। রায়টি লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, যাঁর সঙ্গে অপর দুই বিচারপতি একমত পোষণ করেছেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়টি হাতে পেয়েছেন জানিয়ে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, বালু উত্তোলনের জন্য সেলিম খানের কাছ থেকে চার বছরের রাজস্ব আদায় করতে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

‘পদ্মা-মেঘনার সর্বনাশ: “বালুখেকো” চেয়ারম্যান তিনি’ শিরোনামে প্রতিবেদনে পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা বলেছেন, মেঘনায় নির্বিচার বালু তোলার কারণে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থান দেবে গেছে। ভেঙে পড়ছে নদীর তীরও। জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজননও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে নদী থেকে তোলা বালু বিক্রি করে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের আয় হচ্ছে মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

এর আগে সেলিম খানের করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ‘বাস্তবিক অর্থে সহযোগিতায়’ চাঁদপুরের ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে ৮৬ দশমিক ৩০ কিউবিক মিটার (৩০ কোটি ৪৮ লাখ ঘনফুট) বালু তাঁকে উত্তোলনের অনুমতি দিতে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। চার বছর পর গত মার্চে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে, যা গত ৪ এপ্রিল চেম্বার আদালতে ওঠে। 

সেদিন চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ২৯ মে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এবং হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে রায় দেন।

হাইকোর্ট গুরুতর ভুল করেছে

নথিপত্র ও আইনি দিক পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন ক্ষমতার চর্চা করে নির্দিষ্ট এলাকাকে হাইকোর্ট ‘বালুমহাল’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারে কি না, যেখানে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া আছে সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধিমালার মাধ্যমে বিষয়টি পরিচালনার। এর উত্তর খুবই সাধারণ—‘না’। সুনির্দিষ্ট আইন বা সংবিধির মাধ্যমে যেখানে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেখানে হাইকোর্ট বিভাগ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতার চর্চা করতে পারে না। 

একইভাবে হাইকোর্ট বিভাগ নির্দিষ্ট এলাকাকে বালুমহাল ঘোষণা করতে পারে না। এই মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে প্রশ্ন ওঠা মৌজাগুলোকে ‘বালুমহাল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বলতে দ্বিধা নেই যে ওই রায় ও আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ গুরুতর ভুল করেছে।

রায়ে বলা হয়, হাইকোর্টে রুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে সরকারপক্ষ থেকে বিরোধিতা করে কোনো হলফনামা দেওয়া হয়নি, যা আমাদের অবাক করেছে। সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত সন্দেহজনক। চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমিয়ে ছিলেন।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি নিয়ে বছরের পর বছর ঘুমিয়ে থাকার পাশাপাশি আইন কর্মকর্তা, যাঁরা হাইকোর্ট বিভাগে তাঁদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি—তাঁদের আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039000511169434