সদ্য অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির পাঠদান অনুমতির জটিলতা নিরসন চায় শিক্ষামন্ত্রণালয়। ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে যেসব বিষয় উঠে এসেছে তা অনেকাংশে সত্য নয় বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি দিতে ইউজিসিকে দুই দফা চিঠি দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। শিগগিরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানের অনুমতি দিচ্ছে বলেও জানা গেছে। এ ব্যাপারে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষামন্ত্রণালয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানের অনুমতির বিষয়টি বিবেচনার জন্য আমাদের দুই দফা চিঠি দিয়েছে। এখন আমরা সংরক্ষিত সব কাগজপত্র দেখে পাঠদানের অনুমতির বিষয়টি দেখবো।
জানা গেছে, গত ২০শে নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শাহনাজ সামাদ চিঠিতে ইউজিসিকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানের অনুমতি দেয়ার জন্য চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসির পূর্বানুমতি গ্রহণের কোনো বিধান নেই। তাছাড়াও ট্রাস্টি বোর্ড যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রেজিস্ট্রি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমতির জন্য সংরক্ষিত তহবিলের যে ৫ কোটি টাকা জমা আছে তা ইউজিসির তৎকালীন তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, যার ভিত্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি মিলেছে। এই তহবিল আজ অবধি ভাঙানো হয়নি। তাই ইউজিসির সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত যেসব ত্রুটির কথা বলা হয়েছে তার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তাই নব্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। তার আগে গত ২৬শে অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আরেকজন উপ-সচিব এই ধরনের চিঠি দেয় ইউজিসিকে। ওই চিঠিতেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের অনুমতি দেয়ার জন্য ইউজিসিকে বলা হয়। এ ব্যাপারে জিন্নাত রেহেনা বলেন, ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে যেহেতু ডা. ম্যান্ডি করিমকে ট্রাস্ট অ্যাক্ট ১৯৮২ অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আইনগত সুযোগ নেই, তাই ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে ট্রাস্টি বোর্ডের দ্বন্দ্ব নিরসনের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক নয়। তাই সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিকে পাঠদানের অনুমতির বিষয়টি বিবেচনা করতে ইউজিসিকে বলা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানের অনুমতি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা নিরসন সম্ভব। খুব দ্রুতই পাঠদানের অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং মঞ্জুরি কমিশন। এম আর খান মারা যাওয়ার পর তার মেয়ে ম্যান্ডি করিম ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্তি চেয়েছে। এটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ১৮৮২ অনুযায়ী সম্ভব না বলে মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে বলা হয়েছে। তাই ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। জানা গেছে, নতুন বিওটি গঠনের পর গত জুলাই মাসে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি নামে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস তার রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। যার নং এস-১২৬৯৫/২০১৭। এই ফাউন্ডেশনের পক্ষে এম এ সালামকে অথর হিসেবে সম্পাদন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এম আর খান মারা যাওয়ার পর নতুন বিওটি গঠনের একাধিক কার্যবিবরণী সভা করে এবং রেজুলেশন করে তা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এসব সভায় নির্দিষ্ট কোরাম পূরণ করা হয়। এরপরই জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্ম নতুন বিওটির অনুমোদন ও রেজিস্ট্রেশন দেয়।
এদিকে, প্রফেসর কায়কোবাদের নাম ট্রাস্টিতে অন্তর্ভুক্তি এবং বাদ দেয়ার বিষয়ে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রফেসর কায়কোবাদ অক্টোবর মাসের ২১ তারিখ ‘টু হুম ইট ম্যা কনসার্ন’ নামে প্রত্যয়নপত্র দেন সেখানে তিনি এম আর খান মারা যাওয়ার আগে পদত্যাগের মিটিংসহ অধিকাংশ মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান। পরবর্তীতে তিনি পদত্যাগ করার বিষয়টি তার ইচ্ছা মাফিক হয়েছে বলেও জানান। আর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ইনস্টিটিউট অব সাইন্স ট্রেড টেকনোলজি (আইএসটিটি) সভাপতি দায়িত্ব পালন করায় তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হন। কারণ আইএসটিটি সভাপতি নিয়ম অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হন এবং যখন তিনি আবার সভাপতি পদ ছেড়ে দেন তখন তার পদ প্রত্যাহার হয়ে যান।
সূত্র: মানবজমিন।