দৈনিক শিক্ষাডটকম, টাঙ্গাইল : আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলীর বয়স ৭২ বছর। অভিযোগ উঠেছে, তিনি জোর করে ১৪ বছরের এক স্কুলছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। এ বিষয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে এমন ঘটনা ঘটেছে।
হযরত আলী ধনবাড়ীর মুশুদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান। কিশোরীর বাবা হযরত আলীর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই নেতার বিচার দাবি করেছে সচেতন মহল।
জানা যায়, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরীর পরিবার ও হযরত আলী একই ইউনিয়নের বাসিন্দা।
পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় ওই বাড়িতে বিভিন্ন সহযোগিতা করার নামে যাওয়া-আসা করতেন তিনি। পরে বিভিন্ন প্রলোভনে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর গড়ে তোলেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান চলাকালে জোর করে স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে যান। ওই স্কুলছাত্রীর এক সপ্তাহেও খোঁজ না পেয়ে হযরত আলীর বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীর বাবা গত ২০ ফেব্রুয়ারি ধনবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
এদিকে কিশোরীকে বিয়ে করার ঘটনাটি এলাকায় ছড়িছে পড়েছে। হযরত আলীর স্ত্রী রয়েছেন। নাতনির বয়সী কিশোরীকে বিয়ে করার ঘটনায় উপজেলায় আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সভাপতির বিচার দাবি করেছেন স্থানীয়রা। ঘটনাটি ধাপাচাপা দিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মোটা উৎকোচ দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন অভিযুক্ত হযরত।
কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমি গরিব কৃষক। সহযোগিতার নামে চেয়ারম্যান আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। মেয়েকে তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করেছেন। আমাদের হুমকি-ধমকি দিতেছেন। আমরা নিরীহ মানুষ। ভয়ে আছি। ওই অপরাধীর বিচার চাই।
ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তুলা বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী ওই কিশোরীকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে করেছেন। জোর করে তার বাসায় আটকে রেখেছেন। পরে পুলিশ গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করেছে। আমরা এই জঘন্য কাজের জন্য তার বিচার চাই।
ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নিখোঁজের ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ওই কিশোরী স্কুলছাত্রীকে হযরত আলীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে দেয়া হয়েছে। তবে বিয়ের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। মেয়েটির পরিবার মামলা করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত হযরত আলী বলেন, আমি মেয়েটিকে জোর করে বিয়ে করি নাই। ও স্বেচ্ছায় আমাকে বিয়ে করেছে। ওকে বিয়ে করে আমি ওর জীবন বাঁচিয়েছি। আমার প্রথম স্ত্রীও বিষয়টি জানে।
ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জার। ইউনিয়ন সভাপতির এ ঘটনায় আমাদের দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বসে আলোচনা করে হযরত আলীর বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ খালেদ বলেন, এ ঘটনা সামাজিক অবক্ষয়ের উদাহরণ। সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী যদি এ ঘটনা সত্যি করে থাকেন, তাহলে তার যথাযথ বিচার হওয়া দরকার। না হলে সমাজে এ ধরনের জঘন্য কাজ আরো হবে। সেই সঙ্গে নিরীহ ভুক্তভোগীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।