৮ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় (সৃজনশীল) প্রশ্নপত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেককে নিয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রশ্নে স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রশংসা করা হয়। তালম ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা তিনি। এই পরীক্ষা গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
গতকাল শনিবার চেয়ারম্যানকে নিয়ে প্রশ্নপত্রের বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার রানীরহাট সিরাজগঞ্জ বাজার দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় (সৃজনশীল) প্রশ্ন পত্রের ১ নং ক্রমিকের উদ্দীপক। যা পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে।
প্রশ্নপত্রের উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আব্দুল খালেক সাহেব তালম ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা। তিনি ২০০১ সালে একটি স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এলাকাবাসীর বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দূর করার জন্য তার এলাকায় ২৫টি নলকূপ স্থাপন, রাস্তাঘাট সংস্কার ও নির্মাণ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ইতোমধ্যে তিনি তার এলাকায় একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।’
‘ক. বাংলাদেশে জেলা পরিষদের সংখ্যা কত? খ. জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস’ ব্যাখ্যা কর? গ. আব্দুল খালেক সাহেব কোন ধরনের স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ব্যাখ্যা কর? গ. আব্দুল খালেক সাহেবকে চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখিত দায়িত্ব ছাড়াও আরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়, বক্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর?’
এমন প্রশ্নপত্র দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। সেইসঙ্গে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন, তেলবাজি করে চেয়ারম্যানকে খুশি রাখতে এমন প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আসমত আলী নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক বিখ্যাত মানুষ রয়েছেন। যারা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন এবং করছেন। তাদের নাম দিলে কোনও সমস্যা হতো না। যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। এছাড়া উদ্দীপক ওই প্রশ্নপত্র ভুলেভরা। আসলে চেয়ারম্যানকে খুশি করতে এমন প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক।
হাবিবুর রহমান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গিনেস বুকে নাম লেখাবেন মনে হয়। একজন চেয়ারম্যানের নাম দিয়ে প্রশ্ন করা হয় আমার জীবনে এই প্রথম দেখলাম।’
রফিকুল ইসলাম নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘একজন অভিনেতা থেকে জননেতা। জননেতা থেকে প্রশ্ন নেতা। এটাই সৃজনশীলতা।’
তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, রানীহাট সিরাজগঞ্জ বাজার দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় অষ্টম শ্রেণির প্রশ্নপত্র আমাকে নিয়ে করা হয়েছে, সে বিষয়টি আমিও জানতাম না। প্রশ্ন তৈরির আগে বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এস এম সোহেল রানা জানান তিনি পরীক্ষা চলাকালীন সভাপতি ছিলেন না। পদাধিকার বলে দায়িত্বে ছিলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তারা বিষয়টি জানেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মমিন বলেন, প্রশ্নপত্রের জন্য আমি তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে দিয়েছিলাম। সদস্যদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যানের আত্মীয় ছিলেন। তিনি চেয়ারম্যানকে খুশি করতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এটি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
এমন প্রশ্নপত্র দেখে অবাক হয়েছি উল্লেখ করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফকির জাকির বলেন, ‘এর আগে এমন ঘটনা দেখিনি। কেন এমন প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে তা জানতে চাইবো আমরা।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ বলেন, সৃজনশীল প্রশ্ন করার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সেগুলো যাচাই করে বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।