দৈনিক শিক্ষাডটকম, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মধুপুরে আহম্মদ আলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও তাঁর ভাতিজার নেতৃত্বে শিক্ষকদের মারধর করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্বে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ঢুকে এ হামলা চালানো হয়। এতে পাঁচ শিক্ষক আহত হয়েছেন। ঘটনার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রায় ৩ ঘণ্টা টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে সভাপতি কোরবান আলী পদত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা বিকেল ৫টার দিকে অবরোধ তুলে নেয়।
হামলায় আহতরা হলেন– বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আতিকুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক এবং সহকারী শিক্ষক বুলবুল আহমেদ, বিল্লাল হোসেন বিপ্লব ও আবুল কালাম আজাদ। তাদের মধ্যে আতিকুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাককে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ৪ মার্চ প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। প্রায় পাঁচ মাস আগে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে ছয়টি আবেদন জমা পড়ে। তবে এত দিনেও ব্যবস্থাপনা কমিটি আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করেনি। অভিযোগ রয়েছে, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কোরবান আলী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বদিউজ্জামান বাদল নামে একজনকে ওই পদে নিয়োগ দিতে বিদ্যালয়ের সদস্য সচিব ও দুই প্রতিনিধি শিক্ষককে চাপ দিয়ে আসছিলেন। তারা রাজি না হওয়ায় সভাপতি ক্ষুব্ধ হন। গতকাল সকালে কোরবান আলী বিদ্যালয়ে যান। এরপর দুপুরের দিকে তাঁর ভাতিজা মমিনুল হক মুকুলের নেতৃত্বে ১০-১২ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষকদের এলোপাতাড়ি মারধর করে।
খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে শত শত শিক্ষার্থী সভাপতির বিচার ও পদত্যাগের দাবিতে দুপুর আড়াইটার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার করে যানজটের সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়ে চলাচলকারীরা।
এদিকে সড়ক অবরোধের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মধুপুর থানার ওসি ঘটনাস্থলে যান। তারা অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা সভাপতির বিচার ও পদত্যাগ দাবি করে। পরে সভাপতি কোরবান আলী সবার সামনে পদত্যাগপত্রে সই করেন।
এ বিষয়ে কোরবান আলী বলেন, এই স্কুল আমি প্রতিষ্ঠা করেছি। স্কুলের প্রতি আমার মমত্ববোধ রয়েছে। সদস্য সচিবকে সভা ডাকতে বললেও তিনি সভা ডাকেননি। এখন পর্যন্ত আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই হয়নি। কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, সভাপতি শিক্ষক প্রতিনিধিদের চাপ দিয়ে একজনকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা থেকে সমস্যার উদ্ভব হয়। সভাপতির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াছমিন বলেন, সভাপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় সমস্যার সমাধান হয়েছে। মধুপুর থানার ওসি জানান, অভিযোগ পেলে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।