দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সাত বছর আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় বিদ্যালয়ের ভবনটি। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এত দিন পাঠদান অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ। চার মাস আগে ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল। বেরিয়ে পড়েছে রড। টুপটাপ করে খসে পড়ছে পলেস্তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে খোলা আকাশের নিচে পাঠগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এভাবেই চলছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ৪৭ নম্বর টেংরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার কার্যক্রম।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের টেংরিয়া প্রধানপাড়া গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এলজিইডি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪ কক্ষের একতলা ভবন নির্মাণ করে। প্রায় দীর্ঘ ৩০ বছরের জরাজীর্ণ এই ভবনে ঝুঁকি নিয়ে এখানেই চলছে ১৩৪ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ জালাল বলেন, বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনটি এরই মধ্যে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও একটি নতুন ভবন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে খোলা মাঠে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের অন্যান্য বিদ্যালয়ে দিচ্ছেন। ফলে প্রতিবছরই কমতে শুরু করছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এর আগে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল।
শাহ জালাল আরও বলেন, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলা এলজিইডির একটি দল বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শন করে। ওই সময় ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর নতুন ভবনের জন্য আবেদন করেও এখনো কোনো ফল পাইনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ না হলে শিক্ষার্থীর সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন, আব্দুল মোকাসিন, তৃতীয় শ্রেণির ফাহিম হাসান, নাঈম ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলে, ‘খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড রোদে পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়। গরমে আমাদের যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি পাঠগ্রহণেও আমরা মনোযোগী হতে পারছি না। মাঝেমধ্যে সামান্য বাতাসে ধুলাবালিতে মুখ, চোখ ঢেকে যায়। স্কুলে আসতে মন চায় না। আমাদের একটি শ্রেণিকক্ষের খুব দরকার।’
শিক্ষার্থী হালিমা খাতুনের বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, আশপাশে কোনো স্কুল না থাকায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই সন্তানের লেখাপড়ার জন্য পাঠাচ্ছেন তিনি। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, নতুন ভবন করার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠালেও এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। অভিভাবকেরাও ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না শ্রেণিকক্ষ না থাকায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজার রহমান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের কাছে জানার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন ভবনের জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ে নতুন ভবন নির্মিত হবে।’