দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: অন্য কারণের মতো জেনেটিক বা জিনগত কারণও অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে জিনগত মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে জীবনকাল উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে সহায়তা করতে পারে বলে নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে।
এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক চীনের ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন ড. জুই লি বলছেন, রোগপ্রবণ জিনগত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মানুষের ক্ষেত্রে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৬২ শতাংশ কমানো যেতে পারে।
যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত বিএমজে এভিডেন্স বেসড মেডিসিন জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে অনেক গবেষণায় স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও দীর্ঘায়ুর মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে আবার কোনো কোনো গবেষণায় জীবনকালের জিনগত উপাদানের গুরুত্ব উঠে এসেছে। তবে নতুন এই গবেষণায় প্রথমবারের মতো জীবনধারা ও জিনগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরা হল।
এই গবেষণায় ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তির জিনগত বৈশিষ্ট্য, শিক্ষা, আর্থসামাজিক অবস্থা, রোগের ইতিহাস সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে জানান ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও ওষুধের সহযোগী অধ্যাপক ড. আলাদিন শাদিয়াব। তবে তিনি গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
শাদিয়াব বলেন, ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাই এই গবেষণার ফল পৃথিবীর সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য না-ও হতে পারে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পলিজেনেটিক রিস্ক নম্বর দেওয়া হয়। মানুষের জীবনকাল প্রভাবিত করতে পারে এমন একাধিক জিনের উপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এই স্কোর নির্ধারিত হয়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা স্বাস্থ্যকর জীবনধারার নীতি কতটুকু মেনে চলেন তার ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক ব্যক্তিকে একটি স্কোর দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীদের জীবনকাল সংক্ষিপ্ত, মাঝারি নাকি দীর্ঘ হয় তা জানার জন্য গবেষকেরা ১৩ বছর ধরে তাদের ওপর নজর রেখেছেন।
জিনগত ঝুঁকি নির্বিশেষে যেসব ব্যক্তি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত, তাঁদের অকালমৃত্যুর সম্ভাবনা ৭৮ শতাংশ বেশি ছিল বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেটা সায়েন্স জন হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন অব ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটির পরিচালক লি বলেন, ঝুঁকিমুক্ত জিনের অধিকারী ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের চেয়ে স্বল্প আয়ুর জিনগত বৈশিষ্ট্যধারী ও অস্বাস্থ্যকর জীবনধারায় অভ্যস্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ ছিল।
ডেটা পর্যালোচনায় দেখা যায়, জিনগত ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণের মাধ্যমে জীবনকাল সাড়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়াতে পারেন।
গবেষণাটি পর্যবেক্ষণমূলক ছিল। এর অর্থ হলো, এর মাধ্যমে জীবনকালের সঙ্গে জীবনধারা ও বংশগতি সম্পর্ক মিললেও দীর্ঘায়ুর জন্য তা সরাসরি দায়ী এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে গবেষকেরা এমন চারটি অভ্যাস চিহ্নিত করতে পেরেছেন, যেগুলো অকালমৃত্যুর ঝুঁকির ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
লি বলেন, জীবনকালকে দীর্ঘায়িত করার সঙ্গে চারটি অভ্যাসের সম্পর্ক পেয়েছেন। সেগুলো হলো—ধূমপান না করা, নিয়মিত শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
গবেষণায় পর্যাপ্ত ঘুম বলতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমকে বোঝানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শরীরচর্চাবিষয়ক নির্দেশনায় সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিটের মাঝারি ধরনের শরীরচর্চার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষদের দিনে অ্যালকোহল পানের সীমা বেঁধে দিয়েছে। নারীরা দিনে সর্বোচ্চ একটি ড্রিংক এবং পুরুষরা দিনে দুটি ড্রিংক করতে পারবেন। একটি ড্রিংক সমান ৩৫৫ মিলিলিটার বিয়ার বা ১৪৮ মিলিলিটার ওয়াইন ধরা হয়।
বহু গবেষণায় স্বাস্থ্যকর ও দীর্ঘজীবনের জন্য মেডিটেরানিয়ান ডায়েটের ওপর জোর দেওয়া হয়। এই খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, মটরশুঁটি, বীজ ও জলপাই তেলের মতো উদ্ভিজ্জ উপাদানের ওপর জোর দেওয়া হয়। এতে গরুর মাংসের মতো লাল মাংস কম খাওয়া হয়।
গবেষণায় সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। আর ঘুম না এলে বিছানা থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করতে হবে। ঘুমের সময় ঘর ঠান্ডা ও অন্ধকার রাখতে হবে।
দীর্ঘজীবন পেতে শরীরচর্চাকে দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।