বাংলাদেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রি-স্কুল শিশুরা স্মার্টফোনে আসক্ত যার মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশুর মারাত্মকভাবে স্মার্টফোনের আসক্তি রয়েছে। সম্প্রতি ৪০০ জন প্রি-স্কুল শিশুর (৩-৫ বছর) উপর পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ নাজমুল হক, সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং আর টি এম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রভাষক ফারুক আব্দুল্লাহ্- এর নেতৃত্বে একটি গবেষকদল এই গবেষণা কর্মটি পরিচালনা করেন।
মূল প্রবন্ধটি চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এলসভিয়ারের জার্নাল অব এফেক্টিভ ডিসঅর্ডার নামক একটি প্রথম শ্রেনীর জার্নালের ৩২৯ নং ভলিউমে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ৯২ শতাংশ বাচ্চা তাদের পিতামাতার স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং ৮ শতাংশ বাচ্চার ব্যবহারের জন্য পৃথক স্মার্টফোন আছে। বাংলাদেশে বাচ্চারা প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন ঘন্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে যা WHO কর্তৃক সুপারিশকৃ্ত সর্বোচ্চ সময়ের প্রায় ৩ গুন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু গড়ে পাঁচ ঘন্টা পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।
প্রতি ১০ জন মায়ের মধ্যে ৪ জনই শিশুদের স্মার্টফোনের আসক্তি সম্পর্কে অবগত নন। বাংলাদেশের প্রি-স্কুল বাচ্চারা স্মার্টফোনের আসক্তিতে ভুগছে মূলত বাবা-মা সন্তানদেরকে সময় কম দেওয়ার কারনে (৮৫ শতাংশ )। এছাড়াও খেলার মাঠের (৫২ শতাংশ ) ও খেলার সাথীর (৪২ শতাংশ ) অভাবে বাচ্চারা স্মার্টফোনের দিকে আসক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশ প্রি-স্কুল বাচ্চারা স্মার্টফোন ব্যবহার করে কার্টুন বা কল্পকাহিনী দেখার জন্য, ৪৯ শতাংশ গেম খেলার জন্য এবং ৪৫ শতাংশ ভিডিও দেখা বা গান শোনার জন্য । পক্ষান্তরে, শুধুমাত্র ১৪ শতাংশ অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে। ৭৩ শতাংশ মা বিনা বাধায় কাজ করতে, ৭০ শতাংশ মা তাদের বাচ্চারা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পছন্দ করে বলে, ৬৭ শতাংশ মা তাদের সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য এবং ৩১ শতাংশ মা শিশুকে ঘুম পাড়ানোর জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মা ও বাবার প্রতিদিনের স্মার্টফোনের ব্যবহারের মাত্রাও তাদের সন্তান্দেরকে স্মার্টফোনে আসক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করে। কেননা যেসব মা ও বাবা প্রতিদিন ৩ ঘন্টা বা তার বেশি সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তাদের সন্তানরা স্মার্টফোনে আসক্ত হওয়ার সম্ভবনা প্রায় ৯০ গুণেরও বেশি।
তদুপরি, পেশাজীবী মায়ের বাচ্চারা অধিকহারে স্মার্টফোন আসক্তিতে ভুগছে কেননা তারা তাদের সন্তানদেরকে প্রয়োজন অনুসারে সময় দিতে পারছেন না। আবার ২৫ হাজার টাকা বা তার বেশি আয়ের পরিবারের বাচ্চারা অধিক হারে স্মার্টফোনে আসক্ত।
গবেষণা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ নাজমুল হক বলেন, স্মার্টফোন আসক্তি বর্তমান সময়ে একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটি প্রি-স্কুল বাচ্চাদের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং জ্ঞান বিকাশে নান ধরনের ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। স্মার্টফোনে আসক্ত বাচ্চারা স্মার্টফোনে আসক্ত নয় এমন বাচ্চাদের তুলনায় ৫০০ গুণ বেশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং ২৩০ গুণ বেশি শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ৫০ শতাংশ মা-ই বিশ্বাস করেন যে তাদের সন্তান স্মার্টফোন ব্যবহার করে অনেক কিছুই শিখতে পারে।
ভয়াবহ এই সংকট উত্তরণের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, বাবা-মায়েদের উচিৎ তাদের প্রি-স্কুল সন্তানদের সাথে পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করা এবং তাদের খেলার পরিবেশ ও খেলার সাথী নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে একটি জাতীয় পর্যায়ের গবেষণা হওয়া প্রয়োজন এবং তার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে প্রি-স্কুল বাচ্চাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য একটি নির্দেশানাবলী তৈরী করে সেই অনুযায়ী কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করা প্রয়োজন।