দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: আসছে ‘স্মার্ট মন্ত্রিসভা’। আগামী সপ্তাহেই নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা পথচলা শুরু করবে। তবে এর আগে ঠিক কোনদিন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন- তার দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১০ থেকে ১৩ জানুয়ারির মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হয়ে যেতে পারে। এর আগে আজ-কালের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশ হবে। তারপর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ হবে। এরপর নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, ভোটের আগে ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ১০ জানুয়ারি এমপিরা শপথ নিতে পারেন। এরপর সংসদীয় দলের সভাও হতে পারে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন শেখ হাসিনা। ওইদিনই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা করবে আওয়ামী লীগ। নিয়ম অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সংসদ নেতা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের অনুরোধ জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর মন্ত্রিসভা গঠন করবেন সংসদীয় দলের প্রধান শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হবে। সংবিধান অনুসারে, ২৯ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে। এর আগে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদের কার্যভার গ্রহণ করবেন না।
জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজ মঙ্গলবার গেজেট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এরপর খুব দ্রুত সরকার গঠনের সব প্রক্রিয়া শেষ হবে।
এদিকে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রিসভা গঠন, শপথসহ নানা প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এর আগে শপথের বিষয় আসবে। সেটা ঠিক কবে, এখনি বলা যাচ্ছে না। আগামীতে সরকারের জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা। আমাদের মন্ত্রণালয় এটার জন্য প্রস্তুত আছে বলে মনে করি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে শেখ হাসিনা হোমওয়ার্ক শুরু করেছেন। শিগগিরই নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়াদের তালিকা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। এরপর নির্বাচিতদের এই তালিকা চলে যাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। ব্যস্ততা বাড়বে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের।
দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুযায়ী নতুন মন্ত্রিসভার প্রতিটি সদস্যকে ফোন করে তিনিই জানাবেন সুসংবাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে মন্ত্রিপরিষদের তালিকা হাতে পাওয়ার পরপরই শপথ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শপথের আগে সকাল থেকেই তালিকায় স্থান পাওয়া ভাগ্যবান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের টেলিফোন করে শপথ গ্রহণের জন্য বঙ্গভবনে আসার আমন্ত্রণ জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
স্মার্ট মন্ত্রিসভার শপথ কবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তার দপ্তর থেকে একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরকে (পরিবহন পুল) অন্তত ৪২টি গাড়ি প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের (পরিবহন পুল) পরিবহন কমিশনার মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর গতকাল বলেন, নতুন মন্ত্রিসভার জন্য কয়টি গাড়ি প্রস্তুত রাখতে হবে তার নির্দেশনা এখনো পাইনি। তবু আমরা নতুন মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি প্রস্তত রাখার কাজ শুরু করেছি।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ফের এককভাবেই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এবার শুরুতেই ৪২ সদস্যের মন্ত্রিসভা হতে পারে বলে জানা গেছে। পরে সংখ্যাটি বাড়তে পারে।
একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী নতুন মেয়াদে সুশাসন ও দুর্নীতি দমনের প্রতি বেশি নজর দেবেন। যে মন্ত্রীরা গত পাঁচ বছরে কিছু কাজের মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত করেছেন, সমালোচনায় ফেলেছেন, তারা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন না- এটি একপ্রকার চূড়ান্ত। যারা নিজ মন্ত্রণালয়ের কিছু জটিল সমস্যা নিজেরা সুরাহা করতে পারেননি তারাও নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন। কাজেই বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে এমন কয়েকটি ক্যাটাগরিতে বাদ পড়তে পারেন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। একই সঙ্গে এবারের সরকারে যুক্ত থাকছেন না মহাজেটভুক্ত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তারা একাদশ সংসদে প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করলেও দ্বাদশে তাদের ভূমিকা কী হবে তা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।