সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বিপর্যস্ত ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানার নুহ জেলা আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মূলত পলিশের অনুমতি না মেলার পরও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নুহতে মিছিল করার ঘোষণা দেওয়ায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সেখানে শিক্ষপ্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সহিংসতার আশঙ্কায় নুহ জেলাজুড়ে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও সোমবার হরিয়ানার সহিংসতা বিধ্বস্ত নুহতে শোভাযাত্রার নামে মিছিল করতে চলেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এতে করে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় পুরো জেলাজুড়ে বিশাল নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়াও তিনদিনের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। একইসঙ্গে শোভাযাত্রার ঘোষণায় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এমনকি বাইরে থেকে নুহতে প্রবেশও নিষিদ্ধ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত জুলাই মাসের শেষের দিকে এবং আগস্টের শুরুতে ভারতের হরিয়ানায় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয় এবং পরে তা বেশ দ্রুতই রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রদায়িক সেই দাঙ্গায় ছয়জনের মৃত্যু হয়।
মূলত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) মিছিলে হামলার ঘটনার পর ৩১ জুলাই মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ নুহতে সংঘর্ষে ওই ছয়জন নিহত হন। এছাড়া গুরগাঁওতে একটি মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং হামলায় ওই মসজিদের ইমামও নিহত হয়েছিলেন। এমনকি এই সহিংসতা ভারতের রাজধানী দিল্লির দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।
এনডিটিভি বলছে, অনুমতি ছাড়াই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মিছিল করার ঘোষণা দেওয়ায় হরিয়ানা সরকার আন্তঃরাজ্য এবং আন্তঃজেলা সীমান্তে ১৯০০ হরিয়ানা পুলিশ সদস্য ও আধাসামরিক বাহিনীর ২৪ টি কোম্পানি মোতায়েন করে জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
এছাড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নুহ জেলায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাইরে থেকে নুহতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক বন্ধ এবং মোবাইল ইন্টারনেট ও বাল্ক এসএমএস পরিষেবাও স্থগিত করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সাক্ষী এই জেলায় চার বা তার বেশি লোকের সমাবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, গুরুগ্রামের সোহনা টোলে যানবাহনগুলোতে পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে হরিয়ানা পুলিশ টোলের মধ্য দিয়ে যাওয়া প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।
এনডিটিভি বলছে, জুলাই মাসে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় যাত্রা ব্যাহত হওয়ার পর সোমবার যাত্রা পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়ে গত ১৩ আগস্ট ঘোষণা দিয়েছিল ‘সর্ব জাতীয় হিন্দু মহাপঞ্চায়েত’। তবে প্রথম থেকেই এই মিছিলের অনুমতি দেয়নি হরিয়ানার প্রশাসন। তা সত্ত্বেও শোভাযাত্রা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার মিছিলের আগে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে বার্তা দেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশ ও প্রশাসন এই মিছিল বের করার অনুমতি দেয়নি। তাই এদিন মিছিল নয়, মানুষ চাইলে সোমবার মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করতে পারে। চলতি মাসের শুরুতে নুহ জেলায় যা ঘটেছে, সেটা মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও জোর দিতে হবে।’
সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত রাজ্যটিতে ৩৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১১৮ জনকে প্রতিরোধমূলক ভাবে আটকে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।