ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আনারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছের ‘নিয়োগকর্তারা’। কিন্তু অভিযোগ আছে, তিনি এ পদের ‘যোগ্য নন’।
বিষয়টি নিয়ে আবেদন করা হলে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। কিন্তু তারা সেটি উপেক্ষা করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে স্কুল সংশ্লিষ্টরা নিয়োগকর্তাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে আনারুলের নিয়োগ বাতিল ও এমন অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সম্পর্কে অবগত করতে অনুলিপি জমা দেওয়া হয়েছিল জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে। কিন্তু আদালতের রায় উপেক্ষা করে গত ১৩ মে আনারুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয় সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগকর্তারা।
এমপিও নীতিমালা ২০২১র পরিশিষ্ট ঘ’র ৩০ নম্বর পৃষ্ঠার আট নম্বর ক্রমিকের শর্তানুযায়ী- প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করতে হলে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ, নিয়োগপ্রাপ্ত আনারুল ইসলামকে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে দুই বছরের অভিজ্ঞ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক পদে আনারুলকে নিয়োগ করেন এ কাজের দায়িত্বে থাকা দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের (ডিজি) প্রতিনিধি, ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা অফিস। কোন অদৃশ্য ক্ষমতা বলে তারা এ নিয়োগ দিয়েছেন সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামকরণে থাকা মরহুম মীর সুরতজানের দৌহিত্র মীর বাবরজান বরুণ বলেন, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল আমি লিখিতভাবে কমিটির কার্যক্রমের স্থগিতাদেশের ব্যাপারে হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিই। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও বন্ধ রাখতে আবেদন করি। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ডিজির প্রতিনিধি ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে বিশেষ সুবিধা নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে অবজ্ঞা করে ‘অযোগ্য’ এক ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ করেছে। এর পেছনে যারা জড়িত, আমি তাদের সবার শাস্তি চাই।
বিষয়টি নিয়ে আনারুল ইসলাম বলেন, আমার কাগজপত্র সব ঠিক আছে। তবে তার নিয়োগের কয়েকটি ডকুমেন্ট দেখিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আগে দূরের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। বাড়ি থেকে যাতায়াতে অনেক পরিশ্রম হতো। এখন বাড়ির কাছাকাছি হয়েছে। এর জন্য যদি সরকারি বেতন ভাতা না হয় তাও এখানে বিনা বেতনে চাকরি করবো।
ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর বলেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের ব্যাপারে আমার জানা নেই। আনারুল ইসলাম আমাকে কাগজপত্র দেখিয়ে বলেছে সব ঠিক আছে। তারপরও যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে, আমি উনার সঙ্গে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাফুজুল হোসেন বলেন, কোর্টের স্থগিতাদেশের ব্যাপারে আমার দপ্তরে জানানো হয়েছি। তাই নিয়োগের সময় আদালতের মতামত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। যেভাবেই হোক বিষয়টি আমাদের নজর এড়িয়েছে। তা ছাড়া সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লিখিতভাবে আমাদের জানিয়েছিলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আমরা শুধু পদের বিষয়টি অনুমোদন করি। বাকি কাজ অনেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। নিয়োগের মূল দায়ভার ডিজির প্রতিনিধি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির।
তিন বছরের অভিজ্ঞতা না থাকা ব্যক্তি কীভাবে নিয়োগ পেল এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তদন্ত করবো। আমরা যেমন নিয়োগ দিতে পারি, বাতিলও করতে পারব।