হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি সাদুল্লাপুরের ১৯৯ বিদ্যালয়ে - দৈনিকশিক্ষা

হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি সাদুল্লাপুরের ১৯৯ বিদ্যালয়ে

দৈনিকশিক্ষাডটকম, গাইবান্ধা |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সময়মতো শিক্ষক হাজিরা নিশ্চিত করতে কেনা হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ‘ডিজিটাল হাজিরা’ মেশিন। কিন্তু সেই মেশিন দীর্ঘ চার বছরেও বিদ্যালয়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এমনকি মেশিনগুলো কী অবস্থায় আছে সেটারও খোঁজ নেয় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ– বলছিলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক।

শুধু ওই বিদ্যালয়েই নয়, সাদুল্লাপুর উপজেলার কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ডিজিটাল হাজিরা মেশিন চালু করা সম্ভব হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার বছর আগে উপজেলার ১৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। মেশিনগুলোর মূল্য বাবদ ৪৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সরবরাহকারী সিন্ডিকেটটি। এ সিন্ডিকেটের হোতা ছিলেন গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতির ভাই আমিনুল ইসলাম পাপুল। তিনিই হাজিরা মেশিনগুলো তাঁর লোকজনের কাছ থেকে কিনতে প্রধান শিক্ষকদের বাধ্য করেছেন। 

কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, প্রতিবছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে স্লিপের (স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজে) অর্থ বরাদ্দ আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্লিপের বরাদ্দ আসা মাত্রই বিদ্যালয়ের অন্য কোনো কাজ না করতে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রধান শিক্ষকদের। ওই বছর শিক্ষা অফিস থেকে স্লিপের অর্থে বিদ্যালয়ের জন্য ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনতে বলা হয়। কেউ কেউ উচ্চমূল্যে হাজিরা মেশিন কিনতে আপত্তি জানালে বিভিন্নভাবে শাস্তির ভয়ও দেখানো হয়। 
এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনতে রাজি হন শিক্ষকরা। মেশিন বাবদ প্রতি বিদ্যালয় থেকে নেওয়া হয় ২৫ হাজার টাকা। সংসদ সদস্যের ভাইয়ের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের লোকজন ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছে দেয়। এ সময় মেশিনগুলোর গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি সম্পর্কে জানারও উপায় ছিল না।

প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, গছিয়ে দেওয়া ডিজিটাল হাজিরা মেশিনগুলো প্যাকেটজাত অবস্থায় রাখা হয়েছে। এসব চার বছর ধরে ওই অবস্থায় বিদ্যালয়গুলোতে পড়ে রয়েছে। 

উপজেলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার শফিকুল ইসলাম বলেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ডিজিটাল হাজিরা মেশিন চালু করতে নির্ধারিত একটি কেন্দ্রীয় সার্ভার থাকতে হবে। সর্বক্ষণ ইন্টারনেট সংযোগ থাকা সেই সার্ভারে যুক্ত থাকবে প্রতিটি বিদ্যালয়। কিন্তু সাদুল্লাপুর উপজেলায় এ সংক্রান্ত কোনো সার্ভার চালু নেই। এটি চালু করা ব্যয়বহুল। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, উপজেলার কোনো বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়নি। তবে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য দীর্ঘদিন আগে এ মেশিন কেনা হয়েছে। মেশিনগুলো এখনও সচল আছে, নাকি অচল হয়ে গেছে তাও বোঝা যাচ্ছে না। তবে এগুলো চালু করা গেলে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যথাসময়ে উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করা যেত। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান বাড়ত। 

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, তিনি এখানে যোগদানের আগেই বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়েছে। তবে সেগুলো চালু নেই। কবে নাগাদ চালু করা যাবে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ এগুলো চালু করা ব্যয়বহুল। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা প্রয়োজন। 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সরবরাহকারী আমিনুল ইসলাম পাপুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও কাওছার হাবিব বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল হাজিরা মেশিনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। কিন্তু অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037899017333984