দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: দেশ ও দেশের বাইরে ব্যবসাবাণিজ্যে প্রতিযোগিতা ও চ্যালেঞ্জ যখন বাড়ছে, তখন সরকারের বাণিজ্যসংক্রান্ত বিশেষায়িত ট্রেড ক্যাডার সংকুচিত হয়ে চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
অবহেলায় দিন পার করছেন বিসিএস (ট্রেড) ক্যাডারের হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা। বিভিন্ন ক্যাডারে শত শত কর্মকর্তা থাকলেও বাণিজ্য ক্যাডারে কর্মরত মাত্র ১৩ জন। নানা কারণে এ ক্যাডারে কেউ আসতেও চান না, এলেও ক্যাডার বদল করে চলে যান। এ ক্যাডারের বেশির ভাগ পদ এখন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের দখলে। ইকোনমিক ক্যাডারের মতো ট্রেড ক্যাডার প্রশাসনের সঙ্গে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও প্রক্রিয়াটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে দীর্ঘদিন।
জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য পরামর্শক ও টেক্সটাইল সেলের পদগুলো এবং মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, সরবরাহ ও পরিদর্শন অধিদফতর, কয়লা পরিদফতর, প্রাইস অ্যান্ড মার্কেটিং ইন্টেলিজেন্স অফিসের সব পদ বাণিজ্য ক্যাডারভুক্ত ছিল। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, চা বোর্ড ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর বেশ কিছু পদ প্রেষণে যাওয়ার জন্য বাণিজ্য ক্যাডারের শিডিউলভুক্ত ছিল। বিদেশে পদায়নের সুযোগ থাকায় মেধাবী কর্মকর্তারা এ সার্ভিসে যোগদান করতেন। সে ক্যাডার কমে ৩২ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৩ জন।
পদ থাকলেও সে পরিমাণ কর্মকর্তা নেই। ২২ বছর ধরে এটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে। সুসংগঠিত না থাকায় সরকারকে কোনো সাপোর্ট দিতে পারছেন না এ ক্যাডারে কর্মরতরা। কয়েক বছর কোনো নিয়োগই হয়নি ট্রেড ক্যাডারে। সর্বশেষ ৪১তম বিসিএসে চারজন নিয়েগের সুপারিশ পেয়েছেন। বর্তমান সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ট্রেড ক্যাডার। দেশে ও বিদেশে বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিসিএস ট্রেড ক্যাডারকে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে পুনর্গঠিত করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেড-২ থেকে নবম গ্রেড পর্যন্ত ১০০ পদ ছিল। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে আরও ১৬টি পদ তৈরি করা হয়। এ ১১৬ পদের মধ্যে বিদেশি মিশনে ৩৩, রিজার্ভ ৪ ও প্রেষণে ১৩টি ছিল। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে পদসংখ্যা কমিয়ে ৬৬ করা হয়। পরে আরও কমে বর্তমানে ৩২টি হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, ট্রেড ক্যাডার এতদিনে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে মার্জ হয়ে যাওয়ার কথা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেভাবেই চিঠি দিয়েছে, বৈঠকও হয়েছে। যেহেতু বিদেশে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর পদগুলো এখন ট্রেড ক্যাডারে নেই, আবার অন্য পদগুলো প্রশাসন দিয়ে চলছে; সেখানে কতিপয় কর্মকর্তা এভাবে না রেখে মার্জ করার কথা বলা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক আগেই শুনেছিলাম ইকোনমিক ক্যাডারের মতো এ ক্যাডারও একীভূত করা হচ্ছে। আমরা তো ধরেই নিয়েছি এটা হয়েই গেছে। তবে দ্রুত হওয়া উচিত।’ জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘একটি ক্যাডারে মাত্র ১৩ জন কর্মকর্তা আছেন এটি আশ্চর্যের বিষয়ই বটে। তবে তারা এতদিনে চাইলে ডিএস পুলে প্রবেশ করতে পারতেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে কী করণীয় সে উদ্যোগ নেব।’