দীর্ঘ ১৩ বছর পর আবারও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে শুরু হয় এ পরীক্ষা শেষ হয় বেলা ১২টায়। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞান বিষয়ে ২৫ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। সারাদেশে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিলো। এ পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সারাদেশের বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তার প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে বিস্তারিত।
রৌমারীতে অনুপস্থিত ৩৬ শিক্ষার্থী
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় রৌমারী সিজি জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ের ১৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯২৩ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে বালিকা ৫৭৩ জন ও বালক ৩৫০ জন। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। উপজেলার ১১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২১টি কিন্ডার গার্টেন এবং চারটি এনজিও পরিচালিত স্কুলের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেন।
রৌমারী সিজি জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এবারের প্রাথমকি বৃত্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষার লক্ষ্যে দায়িত্বরত সহকারী শিক্ষকরা পরীক্ষা কক্ষে কক্ষ পরিদর্শক হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালন করেছেন। ইউএনও পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ সদস্যরাও তাদের দায়িত্ব পালন করেন।
কেন্দুয়ায় অনুপস্থিত ৬৯ শিক্ষার্থী :
নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ৯৬৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৯ জন অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। উপজেলার তিনটি কেন্দ্রে মোট ৯৬৮ জন পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা ছিলে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নূরুল ইসলাম জানান, কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৩২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২১ জন, সাবেরুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪২৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ জন, সায়মা শাহজাহান একাডেমি কেন্দ্রে ৩১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ জন অনুপস্থিত ছিলেন। অর্থাৎ অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলেন ৮৯৯ জন।
কেন্দুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল জানান, খুব সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এরকম একটা প্রতিযোগিতা থাকলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আরও গতিশীল হবেন বলে তিনি মনে করেন।
বৃত্তি পরীক্ষা দিলেন কাঠালিয়ার ৩৫৫ শিক্ষার্থী :
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় কাঠালিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার ১৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৫৫জন শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মিজানুর রহমান পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এসময় উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো.আমিনুল ইসলাম, কাঠালিয়া সরকারি পাইলট মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো.মিজানুর রহমান, সহকারি শিক্ষা অফিসার কিং ফয়সাল, মো. সোলায়মান হোসেন, কাজী জাকির হোসেন, কাঠালিয়া প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হোসেন খান, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন আকাশ উপস্থিত ছিলেন।
রংপুরে বৃত্তি পরীক্ষা দিলেন সাড়ে ৬৬ হাজার শিক্ষার্থী :
রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ৯ হাজার ৫৪৭টি সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৬ হাজার ৪৫১ জন খুদে শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ২৬টি কেন্দ্রে ১০ হাজার ৩২৪ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা চলাকালীন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।
রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, দুই ঘণ্টার বৃত্তি পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, প্রাথমিক গণিত ও প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রতিটি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ২০ শতাংশ বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত আর অংশ নিয়ে ভালো পরীক্ষা হওয়ায় খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোসাব্বিরুল ইসলাম বলেন, প্রশ্ন খুব সহজ ছিল, পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আশা করছি বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবো।
অভিভাবক এলিজা পারভিন বলেন, আবারও বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ায় আমরা অভিভাবকরা অনেক খুশি।
বৃত্তি পরীক্ষার ফল ফেব্রুয়ারিতে :
বৃত্তি পরীক্ষার ফল ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করা হবে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে শুক্রবার বিকেলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ফেব্রুয়ারিতে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার পরিকল্পনা আছে। কর্মপরিকল্পনা অনুসারে ফেব্রুয়ারিতে ফল প্রকাশে কথা আছে।
পরীক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিলো। সারাদেশে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় উপস্থিতি ছিলো ৯৫ শতাংশের বেশি। পরীক্ষা সুষ্ঠু পরিবেশে হয়েছে। আমরা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাইনি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় উত্তরপত্র পাঠানো হবে আগামীকাল শনিবার। উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও নিরীক্ষা হবে ২ জানুয়ারি। ৩ থেকে ৬ জানুয়ারি নম্বর কম্পিউটারে এন্ট্রি করতে হবে। ৭ থেকে ৮ জানুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা নম্বর যাচাই করবেন। ১০ জানুয়ারির মধ্যে ফল সিডিতে করে অধিদপ্তরে পাঠাতে হবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।