১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিয়ে বেড়েছে ৫০ শতাংশ - দৈনিকশিক্ষা

১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিয়ে বেড়েছে ৫০ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ১৫ বছরের বেশি কিন্তু ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিয়ের ঘটনা বেড়ে ৪০ দশমিক ৮৫ শতাংশে পৌঁছেছে। আগের বছর যা ছিল ৩২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে, ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিয়ের ঘটনা আগের বছরের চেয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ ধরনের বিয়ের ঘটনা বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এ-সংক্রান্ত এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত বুধবার ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২২’ শিরোনামের চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্সকে বিবিএসের মৌলিক জরিপগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে জনমিতির ১৩৮টি সূচকের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ২৭ সূচক এবং পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ১৭টি সূচকের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে সেখানে। সারাদেশের ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকার প্রায় ১৩ লাখ মানুষের কাছ থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

বিবিএসের জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাল্যবিয়ের ঘটনার দিক থেকে সারাদেশের মধ্যে রাজশাহী বিভাগের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। এ বিভাগে বাল্যবিয়ের ঘটনা সারাদেশের মোট বাল্যবিয়ের গড়ের দ্বিগুণ। ১৫ বছরের আগে বাল্যবিয়ের ঘটনা রাজশাহীতে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খুলনা বিভাগের এ হার ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। বাল্যবিয়ের ঘটনা কমে আসার দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে সিলেট বিভাগ। এ বিভাগে এ ধরনের ঘটনা ১ দশমিক ০৪ শতাংশ। 

অন্যদিকে, ১৫ বছরের বেশি কিন্তু ১৮ বছরের কম বয়সসীমার বাল্যবিয়ের ঘটনাও রাজশাহী বিভাগেই বেশি। রাজশাহীতে এ বয়সসীমার মেয়েদের বিয়ের ঘটনা ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ। এ হারের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বরিশাল। সেখানে এ বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ৪৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রেও সারাদেশের মধ্যে সিলেটের অবস্থান ভালো। সিলেটে এ ধরনের বিয়ের ঘটনা মাত্র ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। 

বিবিএস মনে করে, বাল্যবিয়ের আকস্মিক বাড়ার কারণ আর্থিক বিপন্নতা ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। সংস্থার প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, যে লক্ষ্যে জরিপ, সে-সংক্রান্ত তথ্যই সাধারণত সংগ্রহ করে থাকেন তারা। তাই জরিপ থেকে বাল্যবিয়ের কারণ খোঁজা হয়নি। তবে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে তারা যেসব কারণ জানতে পেরেছেন, তার মধ্যে অন্যতম বাবা-মায়ের চোখে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, দারিদ্র্য ও সচেতনতার অভাব ইত্যাদি। বয়স লুকিয়ে আদালতের মাধ্যমে বিয়ের ঘটনাও বাড়ছে। বিয়ে অনুষ্ঠানের ব্যয় এবং ঝামেলা এড়াতে বাবা-মা এতে সহযোগিতা করছেন। বিবিএসের কাছে মেয়েদের বয়সের তথ্য থাকায় তারা বিষয়টি শনাক্ত করতে পেরেছে। এ ছাড়া করোনা অতিমারির অভিঘাতও বাল্যবিয়ের কারণ হতে পারে। ওই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ছিল বাবা-মায়ের মধ্যে। 

একই কারণের কথা জানা গেছে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক দুটি প্রতিবেদন থেকে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল প্রকাশিত পৃথক প্রতিবেদনেও বলা হয়, অতিমারি চলাকালে বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে। এ কারণে বিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমেছে।

বিবিএসের জরিপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের সম্পদশালী পরিবারের মধ্যেও বাল্যবিয়ের প্রবণতা বাড়ছে। এ শ্রেণির ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের গড় হার ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। ১৫ বছরের বেশি ১৮ বছরের কম বয়সসীমার মেয়েদের বিয়ের হার ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তবে অতিদরিদ্র পরিবারে বাল্যবিয়ের ঘটনা তুলনায় বেশি। অতিদরিদ্র পরিবারে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের গড় হার ৮ দশমিক ০১ শতাংশ। অন্যদিকে, ১৮ বছরের মধ্যে থাকা বয়সীদের অতিদরিদ্র পরিবারে এ হার ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। 

কর্মজীবী শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১৫ বছর কম বয়সীদের ৫ দশমিক ৮২ এবং ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সসীমার ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার। কর্মজীবী মেয়েদের মধ্যে গৃহস্থালি কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে বাল্যবিয়ের ঘটনা বেশি। এ ধরনের ১৫ বছরের কম বয়সসীমার মেয়েদের বাল্যবিয়ের ঘটনা ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ১৮ বছরের কম বয়সসীমার মধ্যে ৪৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার। 

জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম নুরুন্নবী বাল্যবিয় বাড়ার আকস্মিক এ প্রবণতা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বাল্যবিয়ের ঘটনা আর্থসামাজিক অনেক সমস্যা তৈরি করে। এ ধরনের প্রবণতায় দেশ পিছিয়ে পড়ে। ১৮ বছর বয়সের আগে কোনো মেয়ের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিপুষ্ট হয় না। এ কারণে আইন করে বিয়ের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরিণত বয়সে বিয়ের পর একটি মেয়েকে সামাজিকভাবে অনেক পরিণত দায়িত্ব নিতে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় সন্তান জন্ম দিয়ে তাঁকে প্রমাণ দিতে হয়, সে বন্ধ্য নয়। এতে মেয়েটার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর অন্যতম বড় কারণও বাল্যবিয়ে। সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে বাল্যবিয়ের ঘটনা বাড়ছে। শুধু আইন দিয়ে এ ধরনের প্রবণতা রোধ করা যাবে না। জনসচেতনতা বাড়ানোই জরুরি।’ 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037379264831543