সাত মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষক। উর্ধতন কর্মকর্তাদের ধারে ধারে গিয়েও হচ্ছে না কোনো লাভ।
বিদ্যালয় সরকারিকরণ হবার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাল সনদ দাখিল করায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে আত্মীকরণ করা হয়নি। এ কারনেই বেতন নিয়ে জঠিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন জানান, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে জুন-জুলাইয়ে ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৮ জন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারীর এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ হয়। একই সঙ্গে বেতনও রাজস্ব খাতে আত্মীকরণ হয়। এ সময় প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু হেনা মোস্তফা জামানসহ তিন জন শিক্ষকের নিয়োগ আত্মীকরণ হয়নি।
তাই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক জ্যোতিষ রঞ্জন তালুকদারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বসহ আয়ন ব্যয়ন ক্ষমতা দেয়া হয়। এক মাসের মাথায় হৃদরোগে তার মৃত্যু হলে সিনিয়র শিক্ষক সীতোষ কুমার তালুকদারকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর তিনি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাস পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ম অনুযায়ী অগ্রবর্তী করেন। ওই মাসের ২২ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মোসা: রোকেয়া পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে মো: লুৎফুর রহমানকে এডহক ভিত্তিতে জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার বিষয়ে অবহিত করণ চিঠি দেয়া হয়।
পরের মাসের ২১ডিসেম্বরই আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোছা: শাম্মী আক্তার আরেক চিঠিতে জামালগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমানের শিক্ষ-দীক্ষার জাল সনদ দাখিলের বিষয়টি নিস্পত্তির অপেক্ষায় থাকায় আগের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করার কথা জানানো হয়। পরে লৎফুর রহমান প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত লুৎফর রহমানের পক্ষে স্থগিতাদেশ প্রদানের আদেশ দেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আদালত চলতি বছরের ৩১ মার্চ এই আদেশের উপর আট সপ্তাহের স্থিতাবস্থার আদেশ জারি করেন।
এই আট সপ্তাহ পার হয়েছে গত ২৬ মে। এরপর মঙ্গলবার (১২ জুন)পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন সমাধান না হওয়ার শিক্ষকরাও বেতন ভাতা পাননি।
প্রধান শিক্ষক লৎফুর রহমান জানান, ‘মন্ত্রণালয় থেকেও শিক্ষকদের বেতন বিল দেবার জন্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে। শিক্ষকদের বেতন ছাড় দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি দ্রুতই এর সমাধান হবে। আর আমার ক্ষেত্রে জাল সনদ দাখিল করার যে বিষয়টি কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছেন সেটি আদালতে আমার পক্ষে স্থগিতাদেশ আছে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক উপ-পরিচালক আবু সাঈদ মো: আব্দুল ওয়াদুদ জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আইন শাখায় গিয়ে বঞ্চিত শিক্ষকরা পরামর্শ নিতে পারেন। সেখান থেকে তারা যদি মনে করে অন্য কাউকে আয়ন ব্যয়ন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া যায় তাহলে শিক্ষকদের বেতন ভাতা ছাড় দেয়া সহজ হবে।