২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস নিয়ে জটিলতায় পড়েছে শিক্ষা প্রশাসন। আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা জুনের মাঝামাঝি হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এ পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত নাকি পূর্ণ সিলেবাসে হবে সেটি এখনও ঠিক করতে পারেনি শিক্ষা বোর্ডগুলো ও এনসিটিবি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ১২ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে।
সিলেবাস ঠিক না হওয়ায় কলেজগুলো অর্ধবার্ষিক পরীক্ষাও নিতে পারছে না। এতে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরা জানিয়েছেন। কোন কলেজ পূর্ণ সিলেবাসে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছে; আবার কোন কোন কলেজ সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিচ্ছে। শিক্ষা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তহীনতায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেবাস ঠিক করতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটি অনুমোদন হয়ে যাবে।’
২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে দেশে করোনা মহামারী শুরু হয়। ওই বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। পরীক্ষার্থীদের এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ফল দেয়া হয়। পরবর্তীতে দুই বছর সংক্ষিপ্ত পরিসর ও সিলেবাসে উচ্চ মাধ্যমিকের এ পরীক্ষা নেয়া হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে ১২ জুন মন্ত্রণালয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষা পূর্ণ সিলেবাসে হবে কি না?’
শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অন্তত একমাস আগে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু কর্তা-ব্যক্তিদের সময় স্বল্পতার কারণে বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। এতে কলেজগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা প্রস্তুতি আটকে গেছে।
এ বিষয়ে রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহসিন কবির বলেন, ‘এ বছরের প্রথমদিকে সিলেবাস দেয়ার কথা। কিন্তু এনসিটিবি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড তা দিতে পারছে না। এ কারণে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস দেয়ার জন্য তিনি নিজে তিনবার এনসিটিবির চেয়ারম্যানকে তাগাদা দিয়েছেন জানিয়ে অধ্যাপক মহসিন কবির বলেন, ‘আমি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা সিলেবাস দিতে পারছে না। তারা বলছেন, সিলেবাস অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
সিলেবাস অনুমোদনের বিষয়টিকে একাডেমিক বিষয় উল্লেখ করে অধ্যক্ষ বলেন, ‘এসব বিষয়ে মন্ত্রী ও সচিবের পেছনে দৌড়াতে হবে কেন? বোর্ড নিজেরা অনুমোদন দিলে কি হবে না?’
শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কলেজগুলো পূর্ণ সিলেবাসেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার পূর্ণ সিলেবাসেও বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে অনেক ‘পোরশন’ বা অংশ থাকে। সব শিক্ষার্থীর সব অংশ পড়তে হয় না। সিলেবাস প্রকাশ না হওয়ায় এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুশতাক আহমেদ ভূইয়া জানান, এখন তারা দ্বাদশ শ্রেণীর (এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী) টেস্ট পরীক্ষা নিচ্ছেন। আর একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, যারা ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।
আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস এখন পর্যন্ত প্রকাশ না হলেও তারা পূর্ণ সিলেবাস অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেবাস দিয়ে দিলে ভালো হতো। এরপরও আমরা যেহেতু পর্যাপ্ত সময় পেয়েছি এর জন্য প্রায় পূর্ণ সিলেবাসেই শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শিক্ষা বোর্ডের গতবছরের নির্দেশনা অনুযায়ী এটি করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হবে, নাকি পূর্ণ সিলেবাসে সে সর্ম্পকে নতুন কোন নির্দেশনা আমরা পায়নি।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তথ্য জানান, প্রয়োজন হলে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষা পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে (সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে) নেয়া হবে। তবে পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে হলেও পূর্ণ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের পরীক্ষা পূনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শীঘ্রই তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাবেন। মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর প্রায় দেড় মাস চলে গেলেও কলেজগুলো সিদ্ধান্ত জানতে পারছে না।