দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক ও নাটোর প্রতিনিধি : ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে একজন জাল সনদধারী শিক্ষককে নাটোরে নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামানিকের বিরুদ্ধে। ওই নিয়োগকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া প্রতারণার মামলায় অধ্যক্ষকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রওশন আলমের আদালতে হাজির করলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গতকাল সোমবার রাতে নাটোর শহরের বাসা থেকে নাটোর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আগামীকাল বুধবার এ বিষয়ে আদালতে শুনানির জন্য বিচারক তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদি নাটোর সদরের সাধুপাড়ার আয়েজ উদ্দীনের ছেলে মোজ্জাম্মেল হক কলেজের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কলেজের উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের জন্য অধ্যক্ষ তার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর নগদ ১৩ লাখ টাকা দেয়ার পর তাকে কলেজে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে এমপিওভুক্তির সময় অধ্যক্ষ আরো সাতলাখ টাকা ঘুষ নেন। এরপরও ওই শিক্ষকের বেতন ভাতার জন্য এমপিওর কাগজপত্রে অধ্যক্ষ স্বাক্ষরও করেনি, জমাও দেয়নি। ১০ বছর পর গত ২৫ অক্টোবর বাদি নিয়োগের জন্য ঘুষ বাবদ দেয়া টাকা ফেরত চাইলে অধ্যক্ষ তা অস্বীকার করেন। ইতোমধ্যে অধ্যক্ষ ও একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অধ্যক্ষের স্ত্রী বাদি হয়ে মোজ্জাম্মেল হকের বিরুদ্ধে হুমকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। নলডাঙ্গা উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার ও থানা পুলিশ একাধিক বার বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করলেও অধ্যক্ষ রাজি হয়নি।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মোজ্জাম্মেল হক যে শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি জমা দিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন তা জাল। সনদের আসল মালিকের নামও মোজাম্মেল হক। তবে তিনি বরগুনার প্রার্থী। তার বাবার নাম মোশাররফ হোসেন ও মায়ের নাম হাসিনা বেগম। তবে মোজাম্মেল তা জাল করে নিজের বাবা মো. আয়জ উদ্দিন ও মা মরিয়ম বেগমের নাম বসিয়ে সনদটি জাল করেছেন। এ বিষয়ে যাচাই প্রতিবেদন ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএর পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন শাখার সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, মোজাম্মেল হক শুধু সনদ জাল করেননি। তার সনদ যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএ কার্যালয়ে পাঠানো হলে আমরা তা জাল বলে শনাক্ত করি। কিন্তু মোজাম্মেল হক ওই যাচাই প্রতিবেদনও জাল করে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন।
এদিকে অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামানিক তার বিরুদ্ধে করা ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
তবে এ বিষয়ে মামলার বাদি জাল সনদধারী শিক্ষক মোজাম্মেল হকের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।