বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। এ ছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি বাতিল ও সব ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে নতুন কমিটি গঠনসহ তিন দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছে সংগঠনটি।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে সরকারি কর্মকমিশনের প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত বাকি ২৫ ক্যাডারের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিসিএস তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে যে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, সেখানে ২৫টি ক্যাডারের কোনো সদস্য নেই। বরং কমিশন প্রধানসহ ছয়জন সদস্য একটি ক্যাডার (প্রশাসন ক্যাডার), যারা সিভিল প্রশাসনের বৈষম্য সৃষ্টিকারী। এ ছাড়া ইতোপূর্বেও বৈষম্য নিরসনে তাদের দিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং তারা সেই সুযোগে বৈষম্য আরও বাড়িয়েছেন।’
প্রশাসন ক্যাডারের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে মনির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় পেশাদারত্বের কোনো মূল্য দেওয়া হয়নি, এখনো হচ্ছে না। একটি ক্যাডার যাদের প্রকৃত কাজ ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনা, কালের প্রবাহে চাণক্য-নীতি অবলম্বন করে, আজ তারা পুরো প্রশাসন ব্যবস্থা গিলে ফেলেছেন। নিজেদের মূল দায়িত্ব ফেলে আজ তারা সব ক্যাডারের মধ্যে কর্তৃত্ববাদের নীতি গ্রহণ করেছেন।’
তথ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারে প্রায় ৫৩ হাজার কর্মকর্তা চাকরি করেন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জনসেবা- এই ২৫টি ক্যাডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে শুধু একটি ক্যাডারের প্রতিনিধি দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ড. মফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৭৭ জন সচিব রয়েছেন। এই ৭৭ জন সচিব হওয়ার কথা সব ক্যাডার থেকেই। কিন্তু এই ২৫টি ক্যাডারে সচিব রয়েছে মাত্র ৭ জন। বাকি ৭০ জনই একটি ক্যাডার (প্রশাসন) থেকে। বৈষম্য তো সব জায়গাতেই, এখন সংস্কার কমিটি হয়েছে, সেখানে আমাদের কেউ নেই। এখন যেই কমিটি নিজেই বৈষম্যপূর্ণ, সেই কমিটি কীভাবে বৈষম্য দূর করবে। আমরা মনে করি, এই কমিটি কখনোই বৈষম্য দূর করবে না।’
মফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকেই এই সরকার তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করি, এই সরকার কোনো বৈষম্য রাখবে না। তা ছাড়া যদি জনগণের সরকার গঠন করতে হয়, অবশ্যই সবাইকে নিয়েই জনপ্রশাসন তৈরি করতে হবে।’
এ সময় বৈষম্য নিরসনে তিন দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলো হলো বিদ্যমান জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পুনর্গঠন; আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মাধ্যমে সব ক্যাডারের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং সিভিল সার্ভিসের বাইরে জনপ্রশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা।