জন্মনিবন্ধন সনদের নাম অনলাইনে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নেই। আবার কারো জন্মনিবন্ধন হলেও অনলাইনে নামের ঘরে নাম লেখা নেই। এসব সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি পাওয়া নিয়ে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে ২৬ লাখ শিক্ষার্থীর আইডি পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জন্মনিবন্ধন সনদে শিক্ষার্থীর নাম অনলাইনে উভয় ভাষায় (বাংলা ও ইংরেজি) না থাকায় ২৬ লাখ শিক্ষার্থীর আইডি তৈরি হচ্ছে না। সমস্যা সমাধানে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়কে একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করি, শিগগির এর সমাধান হবে।
জটিলতার বিষয়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের সব তথ্য পরিপূর্ণভাবে না থাকলে ইউনিক আইডি তৈরি সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আবেদন ছাড়া কোনো তথ্য সিস্টেমে যোগ করার সুযোগ নেই। এতে আইনি বাধা আছে। এ জন্য ২৬ লাখ শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য একটি ইউনিক আইডি তৈরি এবং সমন্বিত শিক্ষাতথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়ন করতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৫৩ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। প্রকল্পের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন। পরে প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়েও শেষ হয়নি কাজ। এখন প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঘোষণা ছিল, মুজিববর্ষেই (২০২২ সালের মার্চ) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে ইউনিক আইডি কার্ড তুলে দেওয়া হবে। যদিও সে ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি। আর এ জন্য করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের কারিগরি সমস্যাকে দায়ী করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রকল্পের সর্বশেষ (২ জুন) অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ শিক্ষার্থীর ডেটা এন্ট্রি শেষ। এর মধ্যে ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি সিস্টেমে তৈরি হয়েছে। আর বাকিগুলোর ডেটা এন্ট্রি কাজ চলছে।
ইউনিক আইডি তৈরিতে অন্যতম দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার জেনারেল মির্জা তারিক হিকমত বলেন, ইউনিক আইডি দেওয়ার অন্যতম শর্ত জন্মনিবন্ধন সনদে নাম বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় থাকতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে ইউনিক আইডি তৈরি হয় না। জন্মসনদ সংশোধন ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।