এক দশকে (২০১৩ থেকে ২০২২ )বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য সোয়া দুই লাখেরও বেশি নন-ইমিগ্র্যান্ট মার্কিন ভিসা ইস্যু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরও এ ধরনের ভিসা ইস্যু হয়েছে ২৯ হাজার ২০২টি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাসেও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশীদের জন্য মোট ৪ হাজার ৬৩৪টি নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল বি১/বি২ ক্যাটাগরির। একই সঙ্গে ব্যবসায়িক ও পর্যটনের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র গমনের আবেদন করা হলে এ ক্যাটাগরির ভিসা ইস্যু করা হয়। মার্চে বি১/বি২ ক্যাটাগরির অধীনে বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যু করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০টি। আর শুধু ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক কারণে (বি১ ক্যাটাগরি) ইস্যুকৃত ভিসার সংখ্যা ১৫।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করছে। যদিও ভিসা ইস্যুর পরিসংখ্যানে তাদের অংশ তুলনামূলক কম। মার্চে শিক্ষার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার (এফ১ ক্যাটাগরি) ভিসা ইস্যু হয়েছে ২৭২টি। আর শিক্ষার্থীর স্বামী/স্ত্রী অথবা সন্তানদের (এফ২ ক্যাটাগরি) জন্য মোট ভিসা ইস্যু হয়েছে ২১৭টি।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র গমনেচ্ছু বাংলাদেশীরা সামনের দিনগুলোয় দেশটির ভিসা প্রাপ্তি নিয়ে কিছুটা আশঙ্কায় রয়েছেন। তাদের এ আশঙ্কার উৎস বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বিবৃতি। তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গমনেচ্ছু সাধারণ বাংলাদেশীদের ওপর এর তেমন একটা প্রভাব থাকবে না। সাধারণ নাগরিকের ভিসা প্রাপ্তিতে এর কোনো ছাপ না পড়লেও রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এ ঘোষণার বহুমুখী প্রভাবের আশঙ্কা করছেন তারা। যদিও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর নেতারা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় দেশের বিভিন্ন মহলে বিভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নতুন এ ভিসানীতিকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে। এ ভিসানীতি ঘোষণার পরদিন বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা নতুন ভিসা নীতি করেছে। আমরা আশা করছি, আমরা যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, জ্বালাও-পোড়াও চাই না, তাতে এটি আমাদের সাহায্য করতে পারে। এ কারণে যারা জ্বালাও-পোড়াও করে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে, তারা হয়তো বিরত থাকবে। সেটা আমাদের জন্য সহায়তামূলক হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত না, সহায়তামূলক হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের মতে, ‘আমাদের বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। কেননা তারা যখন কোনো নীতি গ্রহণ করে তখন তাদের সব স্তরে আলোচনা করেই নেয়া হয়। ফলে এটা পুনর্বিবেচনার সুযোগ কম থাকে। কাজেই আমি মনে করি, তারা বার্তাটি কীভাবে দিল তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তাদের বক্তব্যের অন্তর্নিহিত বার্তাটি আমাদের বোঝা প্রয়োজন। কী বার্তা তারা দিয়েছে এবং কীভাবে দিয়েছে এ বিষয়টি যদি আমরা না বুঝি এবং আমাদের অবস্থানটা ধরে রাখতে চেষ্টা করি তাহলে আমরা একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারি। তাদের এ ঘোষণার বাস্তবায়ন হলে তা হয়তো জনসম্মুখে আসবে না। শুধু যারা সংশ্লিষ্ট, তারাই জানবে। কিন্তু বিষয়গুলো যদি পাবলিকলি কিছু হয়ে যায় তাহলে বিষয়টি আমাদের জন্য অস্বস্তির হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রার্থী বাংলাদেশী সাধারণ নাগরিকদের ভিসা ইস্যু কার্যক্রমে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’
এশিয়া মহাদেশে অন্য অনেক দেশের নাগরিকদের তুলনায় বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন ভিসা ইস্যুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশীদের জন্য মোট ২ লাখ ২৫ হাজার ৭১৫টি ভিসা ইস্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে হয়েছে ২৯ হাজার ২০২টি। সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে। ওই বছর বাংলাদেশীদের জন্য মোট ৩৫ হাজার ২৫টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল। এর পাঁচ বছরের মাথায় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ইস্যুকৃত ভিসার সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৫০৫টি। আর সবচেয়ে কম হয়েছে কভিড প্রাদুর্ভাব শুরুর বছর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। ওই বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন কনস্যুলার দপ্তরগুলো ভিসা ইস্যু করেছিল ১২ হাজার ৩৯টি।