রাজধানীতে মাসে প্রায় ১,৩০০ প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহার করে একটি পরিবার। এর মধ্যে একটি পরিবার দিনে শুধু পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে ১৩টি। ৩৩ শতাংশ নগরবাসী জানেন না প্লাস্টিকের আবর্জনার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ৬৭ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে মনে করেন নগরের জলাবদ্ধতার জন্য প্লাস্টিকের আবর্জনা দায়ী। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)–এর করা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বুধবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে ‘সবুজ নগরীর জন্য দূষণ কমানো’–শীর্ষক এক সভায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সিপিডির গবেষক সৈয়দ ইউসুফ সাদাত জানান, ৭৭ শতাংশ নগরবাসী মনে করেন ঢাকার বায়ু দূষণের জন্য দায়ী গাড়ির ধোঁয়া। আর ১০ শতাংশ মনে করেন বায়ু দূষণের জন্য দায়ী নির্মাণাধীন ভবন। ৭৬ শতাংশ মনে করেন গত দুই থেকে তিন বছরের তুলনায় ঢাকার বায়ু দূষণ বেড়েছে।
সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে পাঁচ শ পরিবারের ওপর এমন জরিপ করা হয়। তবে ক্যান্টনমেন্ট ও বিমানবন্দর এলাকা জরিপের বাইরে ছিল। জরিপে অংশ নেওয়া রাজধানীবাসী বাসিন্দারা বায়ু ও পলিথিন দূষণ নিয়ে তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
বায়ু দূষণ নিয়ে ইউসুফ সাদাত বলেন, ঢাকা শহরে প্রতি দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট একজন মানুষ জ্যামে সময় পার করেন। প্রতি বছর বায়ু দূষণের কারণে উপসর্গ দেখা গেছে এমন রোগের পেছনে খরচ হয় চার হাজার টাকা। ২০২০ সালে ঢাকার বার্ষিক বায়ু মান ছিল ১৪৫ দশমিক ১ যা ২০২২ সালে ১৬৩ দশমিক ৭। ১৩ শতাংশ নারী গাড়ির মালিক মনে করেন যদি পাবলিক পরিবহন ভালো হয় তাহলে তাঁরা গাড়ি ব্যবহার ছেড়ে দেবেন। পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার ৩২ শতাংশ।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সাদাত বলেন, ঢাকার পূর্ব অংশে প্লাস্টিক দূষণের হার বেশি। ৪৭ শতাংশ বাসার ময়লা সংগ্রহ করে বেসরকারি কর্মী। আর ৪৪ শতাংশ সিটি করপোরেশন থেকে। নিম্ন আয়ের ৫৪ শতাংশ ঢাকাবাসী খাওয়ার পানি প্রক্রিয়াজাত করেন না। মধ্যম আয়ের ক্ষেত্রে এই হার ৪৪ শতাংশ।
সভায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, এটা খুবই খারাপ সংবাদ যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মাত্র ১২ শতাংশ পূরণ হচ্ছে। তবে যেসব দেশ জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে ভালো ভূমিকা রাখছে তারা এসডিজি পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যেসব দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো ভালোভাবে নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখছে তারা ভালো করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ভালো। গত ৫ বছরে এক দশমিক চার বিলিয়ন পাউন্ড বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে। দূষণের সমস্যা কমাতে হলে সমাজের সবার অংশগ্রহণ দরকার।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ভূমিকা নেওয়া হয় না সরকারি সংস্থা থেকে। বরং সব ক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গ করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে যেখানে বায়ুমান কমানো হয় সেখানে বাংলাদেশে বাড়ানো হচ্ছে। সঠিক তথ্য কেউ জানছে না। ঢাকার মানুষ ইটভাটা দেখে না বিধায় তারা মনে করছে দূষণের জন্য গাড়ি দায়ী। অন্যদিকে বেশি দূষণ করছে পাবলিক পরিবহন।
হাবিবুন নাহার বলেন, সবাই সব সময় সরকারের ভুল ধরছে। তবে কেউ নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করেন না। ঢাকা শহরে প্রতিটি বাসিন্দাদের বাড়িতে গিয়ে এগুলো বিষয় দেখা কারও পক্ষেই সম্ভব না। তাই নাগরিক যদি সচেতন হয় তাহলে দূষণ কমানো সম্ভব।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, টেকসই উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সামিয়া সেলিম, বেলার আইন গবেষক বারিশ হাসান চৌধুরীসহ অন্যান্যরা।