গত তিন বছরে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালকের (ডিজি) সম্পাদনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১৩টি বই প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই বই প্রকাশ হয়েছে প্রখ্যাত কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) থাকাকালে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কথাসাহিত্যিকেরা। তাঁরা বলেছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত আসে সরকারিভাবে। এ ছাড়া সরকারকে তোষামোদীর অংশ হিসেবেও এমন বই বের করা হয়।
মুহম্মদ নূরুল হুদা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই তিন বছরের জন্য ডিজি পদে নিয়োগ পেয়ে ১৩ জুলাই যোগ দেন। চলতি বছরের ২৪ জুলাই হারুন-উর-রশীদ আসকারী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর সম্পাদনায় ও রচিত মোট ২৬টি বই প্রকাশ ও পুনর্মুদ্রণ করে বাংলা একাডেমি। এর ১৩টি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।
জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির সচিব মো. নায়েব আলী বলেন, তিনি সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন। বই প্রকাশের বিষয় মহাপরিচালক দেখেন।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইয়ের তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, এ সময়ে সাবেক ডিজি কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সম্পাদনায় এবং রচিত ২৬টি বই প্রকাশ ও পুনর্মুদ্রণ করা হয়। এগুলোর মধ্যে ১৩টিই বঙ্গবন্ধু, তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বড় মেয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে সংকলিত বই। এর মধ্যে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ‘আগস্ট ২০২১: শোক থেকে শক্তি, শক্তি থেকে জাগরণ’। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বের হয় দীপ্ত জয়োল্লাস শেখ রাসেলকে নিবেদিত ছোটদের ‘ছড়া ও কবিতা’, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে নিয়ে ‘বঙ্গজাতিমাতা’ এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে’।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সম্পাদনায় প্রকাশিত আটটি বই হলো ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী: পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘আমার দেখা নয়াচীন: পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘কারাগারের রোজনামচা: পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘পদ্মাসেতু: স্বপ্নমঙ্গলের কথা’, ‘মাস্টার শাহ আলমের পুঁথিকাব্যে জাতির পিতা’, ‘প্রাণের মেলায় শেখ হাসিনা’, ‘শেখ হাসিনার স্বপ্নকথা’ এবং ‘গণতন্ত্রের মনোকন্যা শেখ হাসিনা: শত শিশু-কিশোরের শত কবিতায় জন্মদিনের শুভকামনা’। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে পুনর্মুদ্রণ করা হয় ‘রাসেলের জন্য ভালোবাসা’ বইটি।
বিষয়টির সমালোচনা করে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার বলেন, এমন বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসে সরকারিভাবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, গণভবন থেকেও চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাই করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারকে তোষামোদীর অংশ হিসেবেও করা হয়। তবে এতে বাংলা একাডেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়া জাকির তালুকদার একাডেমিতে অনিয়ম, গণতন্ত্রহীনতা ও আমলাতান্ত্রিকতার অভিযোগও করেন।
কবি ও কথাসাহিত্যিক টোকন ঠাকুর বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় অবস্থান থেকে একটি, দুটি বা পাঁচটি বই বের হতে পারে। কিন্তু এত বই টাকা বিনাশের প্রকল্প। এটি ক্ষমতাসীনদের কাছাকাছি যেতে তেলবাজির অংশ।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে বেশ কয়েকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। ফিরতি ফোনও করেননি।