সারা বিশ্বে আজ (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হচ্ছে। এর মধ্য জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) এক প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বের প্রতিটি শিশুকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এখনো বিশ্বে ঘাটতি আছে শিক্ষকের। আর সংখ্যাটি হচ্ছে ৪ কোটি ৪০ লাখের বেশি। ইউনেসকোর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আফ্রিকার সাব-সাহারান এলাকায় শিক্ষকের ঘাটতি আছে এক–তৃতীয়াংশ। তবে অবস্থা খুব বেশি ভালো নয় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকারও, সেখানেও ঘাটতি আছে শিক্ষকের।
শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা বলছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ শতাংশ শিক্ষক ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দেও শিক্ষকতা ছেড়েছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষক। গত সাত বছরে শিক্ষকের পেশা ছাড়ার এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হলো।
ইউনেসকোর মহাপরিচালক ওদ্রে আজুলে বলেছেন, ‘শিক্ষকেরা আমাদের সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তবু এ পেশা বড় পেশাগত সংকটের মুখোমুখি। বিশ্বের কিছু অঞ্চলে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। বিশ্বের কিছু অঞ্চলে শিক্ষকেরা পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। উভয় ক্ষেত্রেই উত্তর একই। আমাদের অবশ্যই আরও ভালো মূল্যায়ন করতে হবে, শিক্ষকদের আরও ভালো প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং শিক্ষকদের আরও ভালো সহায়তা করতে হবে।’
ইউনেসকো বলছে, শিক্ষকের ঘাটতি ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ৬ কোটি ৯০ লাখ। সেখান থেকে ঘাটতি কমেছে। বেশির ভাগ ঘাটতি কমেছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এ এলাকায় ঘাটতি প্রায় অর্ধেকে (৭.৮ মিলিয়ন) নেমে এসেছে।
সাব-সাহারান আফ্রিকা বিশ্বব্যাপী শিক্ষকঘাটতির এক–তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। একই সময়ের মধ্যে (২০১৬ থেকে ২০২২ সাল) এ এলাকায় ২০ লাখ শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ হয়েছে। ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সবার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণের জন্য এ অঞ্চলে ১ কোটি ৫০ লাখ শিক্ষকের প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলোসহ বিশ্বব্যাপী শিক্ষক কম থাকার সমস্যা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম শিক্ষক নিয়োগ, কম বেতনের সঙ্গে আছে উচ্চমাত্রার চাপ। এসব মোকাবিলা করেই অনেকে শিক্ষকতা করেন।
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় অবসর গ্রহণ এবং ‘পেশায় প্রবেশের আগ্রহের অভাব’-এর কারণে এখনো ৪ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষক প্রয়োজন। ‘মানসম্মত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা’ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন এই শিক্ষকদের।
আফ্রিকার কিছু অংশে, বিশেষ করে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা অংশে গত ৪ বছরে ১৩ হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ রয়েছে। ইউনিসেফ বলেছে, চলতি সপ্তাহে শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও বুরকিনা ফাসোর এক–চতুর্থাংশ স্কুল বন্ধ। দেশটির ১০ লাখ শিশু ও ৩১ হাজার শিক্ষক স্কুলে ফেরার অপেক্ষায়।
বুরকিনা ফাসোতে ইউনিসেফের প্রতিনিধি জন অ্যাগবোর বলেছেন, ‘সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখনো অনেক শিশু স্কুলে ফিরতে পারছে না। অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া খুবই হতাশার। আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এতে বুরকিনা ফাসোর প্রতিটি শিশু শিক্ষার সুযোগ পেতে পারে। শান্তি ও নিরাপত্তায় তাদের স্বপ্ন যাতে পূরণ হয়, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’