কণ্ঠশিল্পী ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ করেছেন হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। তবে মমতাজ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, প্রায় এক বছর আগে উপজেলার ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে তিনি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমও ওই পদে নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে পরাজয় জানতে পেরে মমতাজ নিজের অনুসারি লোকজন দিয়ে তার দুই ভোটারকে বেদম পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।
দেওয়ান সাইদুর রহমান জানান, এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। এতে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম তার ওপর ক্ষুব্ধ হন। সম্প্রতি উপজেলায় পদ্মা নদীতে বালু মহাল ইজারা পান তিনি। এ বালুমহাল ইজারা নিতে দরপত্র প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের ব্যক্তিগত সহকারী অংশ নেন। তবে সরকারি নিয়মানুযায়ি তিনি বালুমহাল ইজারা পেয়েছেন। পরে মমতাজ বেগম বালুমহাল বাতিল করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দেন। তবে বালুমহালটির ইজারা বাতিল হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ।
উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ থেকে শুরু করে তিনি এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিনি এ পর্যন্ত তিনবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী তার সঙ্গে রয়েছে। সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের দলে স্থান দিয়েছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা দলের কর্মসূচি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। এতে আগামী নির্বাচনে দলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্ক রয়েছে।
সাইদুর রহমান বলেন, গত এক বছরে সংসদ সদস্যের অনুসারী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী অন্তত ২০ জনের মাথা ফাটিয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মমতাজ বেগম তার ওপর জুলুম, অত্যাচার শুরু করেছেন। বিভিন্ন মামলা ও হামলা করে তাকে হয়রানি করে আসছেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান এক সময় ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। লুৎফরসহ সংসদ সদস্যের অনুসারি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নামধারী নেতাকর্মীরা চাপাতি ও রাম দা নিয়ে মোটরসাইকেলে করে তার (সাইদুর) কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলার চেষ্টা করেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আরো বলেন, তার অনুসারী নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। তার ছেলের বিরুদ্ধেও তিনটি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার উপজেলা চত্বরে পুলিশের সামনেই ছাত্রলীগে থাকা সংসদ সদস্যের অনুসারিরা ধুলশুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে বেদম মারধর করে। একই দিনে হৃদয় নামের এক সাধারণ তরুণকে বেদম মারধর করা হয়। এ ছাড়া কয়েক দিন আগে ওই সন্ত্রাসীরা যুবলীগের এক নেতার হাত ভেঙে দিয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেছেন, উপরের চাপ রয়েছে, এ কারণে মামলা নেয়া হয়নি। এই অবস্থায় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান আরো বলেন, ‘আমার জীবনের নিরাপত্তা নেই। বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে বলা হচ্ছে, আমি যেন লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে চলি। আমি ভয়াবহ অবস্থায় আছি। আমার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম ও তার অনুসারীদের জন্যই হবে।’
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। তারা কাউকে মারধর ও হামলা করেননি। উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে ও তার লোকজন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে।
মামলা না নেয়ার বিষয়ে আজ শুক্রবার বিকেলে হরিরামপুর থানায় গেলে ওসি সুমন কুমার আদিত্যকে পাওয়া যায়নি। পরে তার সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ নেই। আমার কর্মকাণ্ড এবং ওনাদের (উপজেলা চেয়ারম্যান) কর্মকাণ্ড মানুষ জানে। কি কারণে তিনি আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর ক্ষিপ্ত তিনিই তা ভালো বলতে পারবেন। তার ছেলে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগের নেতাদের মারধর করেছে। তিনি ও তার ছেলে বেপরোয়া হয়ে গেছে। তাদের কারণেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। পদ্মা নদীর বাঁধের কাছে বালু উত্তোলন করায় স্থানীয় জনগণই বাঁধা দিয়েছে।’