‘আর যেন কেউ বাবার নামের জন্য রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়’ - দৈনিকশিক্ষা

‘আর যেন কেউ বাবার নামের জন্য রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়’

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি |

এক যুগেরও বেশি সময় আগে বাবার নাম দিতে না পারায় এক ছাত্রীর এসএসসির রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ না হওয়ার ঘটনায় করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সম্প্রতি রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। শুধু মায়ের পরিচয়ে শিক্ষাসহ রাষ্ট্রীয় সব সুবিধা পাওয়ার যুগান্তকারী এই রায়ে সন্তুষ্ট ঠাকুরগাঁওয়ের সেই শিক্ষার্থীর পরিবার, শিক্ষক ও এলাকাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা, শিক্ষক ও এলাকাবাসী হাইকোর্টের ওই রায় সম্পর্কে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। 

ওই ছাত্রী যে বিদ্যালয়ে পড়তেন তার সাবেক প্রধান শিক্ষক ইমদাদুল হক বলেন, ‘২০০৭-৮ শিক্ষাবর্ষে তৎকালীন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আমার বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল ওই ছাত্রী। নাম রেজিস্ট্রেশনের সময় ওই ছাত্রী তার বাবার নামের ঘর পূরণ করেনি। তখন আমি তার ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলি এবং বাবার নাম দেয়ার জন্য জানাই। তারা বাবার নাম দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’

বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের সময় শেষের দিকে, বাবার নামের ঘরে মায়ের নাম বসিয়ে শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করি। পরের বছর ওই ছাত্রী দশম শ্রেণিতে ওঠে। কিন্তু তার নাম রেজিস্ট্রেশন হয়নি। কয়েক দিন পর প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি বোর্ডে আবেদন করি, কিন্তু শিক্ষা বোর্ড এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রেরণ করেনি। ওই বছর সেই ছাত্রীর আর পরীক্ষা দেয়া হলো না। স্কুল থেকে ঝরে গেল সে। পরিবারে আর্থিক সংকটের কারণে পরের বছর পাড়ি জমায় রাজধানীতে। সেখানে একটি গার্মেন্টেসে কাজ শুরু করে। এর কয়েক বছর পর ঢাকায় পঞ্চগড়ের এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই ছাত্রীর। তখন শিক্ষক হিসেবে আমার যে কষ্ট হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনি।’

ইমদাদুল হক বলেন, ‘পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতা থাকলেও ছাত্রী হিসেবে সে মোটামুটি ভালো ছিল। তখন স্থানীয় সাংবাদিকরা লেখালেখি করলেও সে আর পরীক্ষা দিতে পারেনি।’

জানা গেছে, বাবার নাম দিতে না পারার কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে না-পারা সেই ছাত্রী এখন এক ছেলে, এক মেয়ের মা। বড় ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে এবং মেয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী রাজধানীর একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন।

ওই ছাত্রীর মা পৈতৃক জমিতে জীর্ণ কুটিরে বসবাস করছেন। অন্যের বাড়িতে কাজ আর জমিতে শ্রম দিয়ে চলছে জীবনযুদ্ধ। বাড়িতে চারটি ছাগল আর হাঁস-মুরগি পালন করে চলে তার জীবন। ওই শিক্ষার্থীর মায়ের চোখেমুখে বিষণ্নতার ছাপ। পুরনো সেই কথা আর মনে করতে চান না তিনি।

মেয়ের পরীক্ষা না দিতে পারার কষ্টে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে খুশি, আর যেন কোনো মায়ের সন্তান বাবার নামের অনুপস্থিতিতে সমাজের বা রাষ্ট্রের সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়।’

এলাকাবাসী জানায়, পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে ওই ছাত্রীর মা ছিলেন দ্বিতীয়। পরিবারের অভাবের কারণে স্থানীয় এক প্রভাবশালী বিত্তবানের বাসায় কাজ করতেন। ওই বাড়িতে কাজ করার সময় তার গর্ভে সন্তান আসে। তবে পরিবারটি সেই সন্তানের পিতৃপরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানায়। পরিবারটি প্রভাবশালী হওয়ায় পরিচয়ের যথাযথ বিচারও পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে বাবার পরিচয় ছাড়াই বড় করতে থাকেন কন্যাসন্তানকে। প্রভাবশালীদের চাপে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও মহিলা পরিষদসহ নারীপক্ষ ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ওই ছাত্রীর পরীক্ষা দিতে না পারার ঘটনায় উচ্চ আদালতে যে রিট করেছিল, তার চূড়ান্ত রায় প্রদান করা হয় গত মঙ্গলবার। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন। এর আগে অবশ্য ওই বছর আদালত আদেশ জারি করে।

রায়ে বলা হয়, পিতৃ পরিচয়হীন সন্তানের অভিভাবক হতে পারবেন মা। শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় যেকোনো ফরম পূরণের ক্ষেত্রেও মাকে অভিভাবক রাখার নির্দেশ দিয়ে রায় দেয় হাইকোর্ট। এতদিন অভিভাবকের ক্ষেত্রে কেবল বাবার নাম দেওয়ার সুযোগ ছিল।

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032370090484619