‘কারাগারে খালেদা জিয়াকে গরুর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে’ - দৈনিকশিক্ষা

‘কারাগারে খালেদা জিয়াকে গরুর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে’

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

সম্প্রতি সশস্ত্রবাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর মধ্যদিয়ে প্রায় এক যুগ পর এমন কোনো অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে দেখা যায় তাকে। দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

এ অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন ডেল মেডিকেল স্কুল ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিনের অধ্যাপক রুমি আহমেদ। ওই পোস্টে তিনি খালেদা জিয়ার সেনাকুঞ্জে উপস্থিতিকে মিরাকল বলে উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে কারাগারে থাকাকালে তার সঠিক চিকিৎসা হয়নি, উল্টো ‘গরুর চিকিৎসা’ তার ওপর প্রয়োগের অভিযোগ তুলেছেন এই অধ্যাপক। 

ফেসবুক পোস্টটি অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলও শেয়ার করেছেন।
 
ওই পোস্টে অধ্যাপক রুমি লিখেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সেনাকুঞ্জ সফরের অনেক ভিডিও দেখলাম গতকাল! আমি যেহেতু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র- আমি ওনার ভিডিওগুলো দেখেছি অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে! প্রথমত কাল দেখলাম হাসছেন এবং শ্বাস নেয়ার জন্য না থেমে এবং না হাপিয়ে গিয়ে মোটামুটি লম্বা সময় কথা বলতে পারছেন। আরেকটা বিষয় লক্ষ করলাম ওনার অক্সিজেন লাগছে না! এই পুরো ব্যাপারটা একটা মিরাকল ছাড়া আর কিছু না। ’

‘এই কিছুদিন আগে ৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া ৬-৭ মাস টানা আইসিইউতে কাটালেন। ওনার কিডনি ফেইল করেছিল; হার্ট ফেইলিউর ছিল; লিভার পুরো ফেইল করেছে। লিভার ফেইলিউরের জীবনঘাতী কমপ্লিকেশন যা যা হতে পারে সবই তার ছিল- সারা শরীরে পানি, পায়ে পানি, পেটে পানি, ফুসফুসে পানি! প্রতিদিন পেট আর ফুসফুসের পাশ থেকে থেকে সুঁই ঢুকিয়ে লিটারকে লিটার পানি ড্রেইন করতে হতো। তার দুই চেস্টে চেস্ট টিউব ঢোকানো ছিল কন্টিনিউয়াস পানি ড্রেইন করানোর জন্য। ঘাড়ের মধ্যে বিশাল মোটা ডায়ালাইসিস লাইন ছিল। আরো কিছু কঠিন সমস্যা ছিল যেমন রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস তার কথায় পরে আসছি।’
 
তিনি আরও লিখেছেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে এডভান্সড আইসিইউগুলোতে আমি কাজ করছি গত ২০ বছর ধরে। ৮০ বছর বয়সি একজন মানুষ অ্যাডভান্সড রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ যার লিভার ফেইল করেছে- কিডনি ফেইল করেছে; সিভিয়ার পালমোনারি হাইপারটেনশন আছে- এইদেশে আমরা আশা ছেড়ে দিতাম! কারণ ৮০ বছর বয়সি একজন মানুষের লিভার ফেইলিউর একটা ওয়ানওয়ে জার্নি। বাকি সব অর্গান ডোমিনোর মতো ফেইল করা শুরু করে। রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।

‘মিসেস খালেদা জিয়া যে ৭ মাস আইসিইউ থেকে কাল সেনাকুঞ্জে এসে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন- আবারও বলছি এটা মেডিকেল মিরাকল। ওপরওয়ালা কোথাও কেউ নিশ্চয় আছেন; যিনি সম্ভব - অসম্ভবের কারিগর- উনিই হয়তো চেয়েছেন অসম্ভবের ঘড়ির কাটাটাকে হাত দিয়ে ঠেকিয়ে রাখতে। কেউ ওনাকে এই দিনটা দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন! কারও কোনো পূণ্য আছে কোথাও এই সম্ভব-অসম্ভবের উল্টোচালে।’


 
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে অধ্যাপক রুমি আরও লিখেছেন, ‘আপনারা কেউ কি ওনার হাত দুটো খেয়াল করেছেন? কীভাবে বেঁকে গিয়েছে? আমরা মেডিকেল কলেজে পড়েছি সোয়ান নেক ডিফর্মিটি; বাটোনেআর ডিফর্মিটি, গত শতব্দীর টার্ম! এই শতাব্দীর মেডিকেল স্টুডেন্টরা এগুলো খুব একটা দেখে না এখন। রিউমাটয়েড আর্থরাইটিসের চিকিৎসা না হলে বার্ন্ট আউট হয়ে যায়। অ্যাডভান্সড রিউমাটোয়েড আর্থরাইটিসের শেষ পর্যায়ে গিয়ে হাতগুলো এভাবে শক্ত হয়ে কুঁকড়ে যায়। দুটো হাতই শুধু অচল হয় না অবর্ণনীয় যন্ত্রণা হয়, হাইডোজ ইমিউনিটি সাপ্রেস করা মেডিসিনে না থাকলে।’
 
উনি আরও লিখেছেন, ‘আপনি কি খেয়াল করেছেন উনি পা লম্বা করে হুইল চেয়ারে বসে ছিলেন। উনি পা ভাঁজ করতে পারেন না! ওনাকে স্ট্র্যাপ দিয়ে হুইল চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল, যাতে পড়ে না যান। আমি খেয়াল করছিলাম ওনার ছোট পুত্রবধূ প্রতিটা মুহূর্ত শ্বাশুড়ির দিকে চোখ রাখছেন- কখন কি হয়ে যায়! একটা জীবন চিন্তা করুনতো? অবর্ণনীয় ব্যাথার কারণে পা ভাঁজ করা যায় না- স্টিফ হয়ে গিয়েছে- হাত দুটো অচল! পুরো পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে ওনাকে! হ্যাঁ, আমি বলছি ‘দেয়া হয়েছে’, এমনি এমনি সব হয়নি!’
 
‘আগে ওনাকে যখন টিভিতে দেখেছি- তখনতো এত খারাপ অবস্থা ছিল না। উনি এই হাত দিয়ে করমর্দন করতেন- সারাদিন ফাইল স্বাক্ষর করতেন! একটু খুঁড়িয়ে হলেও হাঁটতে পারতেন। ২০০৮-এর নির্বাচনের আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৯ ঘণ্টা ক্যাম্পেইন করেছেন- সারারাত পথসভা করেছেন। আজকাল আমরা এই ধরনের রিউমাটয়েড ডিফর্মিটি খুব কম দেখি। কারণ আজকাল রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিসের অনেক ডিজিজ মোডিফাইয়িং ওষুধ আছে। এই ওষুধে রোগ কন্ট্রোল করে রাখা যায়! একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান রিউমাটয়েড আরথ্রাটিসকে এখন আর ওই পর্যায়ে পৌঁছতে দেয় না।’
 
তিনি অভিযোগ করেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) যেই চার-পাঁচ বছর জেলে ছিলেন- তখন তার ওপর গরুর চিকিৎসা হয়েছে, মানুষের চিকিৎসা হয়নি। উনি আধুনিক কোনো চিকিৎসা পাননি! যেই ওষুধ দেয়া হয়েছে- তাতে ওনার ডিজিজ কন্ট্রোলতো হয়ইনি, লিভার ও কিডনি ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে।’
 
অধ্যাপক রুমির মতে, ২০০৭ এর পর থেকে জিয়া পরিবারের ওপর নানা অত্যাচার-নির্যাতনের ঝড় বয়ে গেছে। তিনি লিখেছেন, ‘২০০৭ এর পর থেকে জিয়া পরিবারের ওপর যা গিয়েছে, তা ট্র্যাজিক মহাকাব্য। বড় ছেলেকে মেরে কোমর ভেঙে দেয়া হয়েছিল, তার দশ বছর লেগেছে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে। আরেক ছেলের ওপর ( যে রাজনীতির র-এর সঙ্গেও জড়িত ছিল না) তার ওপর কি ঝড় গিয়েছে আল্লাই জানে। ছাড়া পাবার কিছুদিন পর ৪৫ বছরের সুস্থ তরুণ ক্রিকেট প্লেয়ার মানুষটা ধুম করে মরে গেলেন। এই কাজগুলো যারা করেছেন, যাদের সিদ্ধান্তে হয়েছে, যারা এক্সিকিউট করছেন, তাদের জিয়া পরিবার ক্ষমা করলেও, এই দেশের একটা বিশাল অংশের মানুষ কোনোদিনই ক্ষমা করবে না!’

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে যাওয়ার এখনই প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
 
তার মতে, ‘খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার মতে এখন পলিটিক্যাল ও পারিবারিক ডিসিশন; মেডিকেল ডিসিশন না। ওনার যে মেডিকেল টিম- তাদের অনেককে আমি চিনি। ওদের ওপর আমার শতভাগ আস্থা আছে। আমি মনে করি, উনারাই যথেষ্ট। ওনাকে (খালেদা জিয়া) টেনে হিঁচড়ে বিদেশে নেবার কোনো যুক্তি বা মেডিকেল নেসিসিটি আমি দেখি না। এটা আমার ব্যক্তিগত মত। ওনার পরিবার আরো ভালো বুঝবেন।’
 
পরিশেষে অধ্যাপক রুমি খালেদা জিয়ার দীর্ঘ জীবন কামনা করেন। পাশাপাশি নিজ বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা কাজ চালিয়ে নেয়া এবং তাকে টানা-হিঁচড়া না করারও আহ্বান জানান তিনি। 

মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.013230800628662