‘প্রক্সিকাণ্ডে আ*ত্মহ*ত্যার’ ঘোষণা দেয়া তন্ময় আরো একবার বহিষ্কার হয়েছিলেন - দৈনিকশিক্ষা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়‘প্রক্সিকাণ্ডে আ*ত্মহ*ত্যার’ ঘোষণা দেয়া তন্ময় আরো একবার বহিষ্কার হয়েছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময় ভর্তি জালিয়াতিতে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে সংগঠন থেকে দুইবার বহিষ্কৃত হয়েছেন। যদিও তিনি নিজেকে সবসময় নির্দোষ বলেই দাবি করে এসেছেন। তবে এবার প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত থাকায় গতকাল শনিবার স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত হয়েছেন এই ছাত্রনেতা।

এদিকে দুইদিন আগেই তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে ভর্তি জালিয়াতিতে আমার সম্পৃক্ততা আছে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে নিজের ফাঁসি নিজেই কার্যকর করব।

এর আগে, ভর্তি জালিয়াতি রোধে পদক্ষেপে নিতে গত ২৮ মে তন্ময় ও তার অনুসারীরা রাবি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের কাছে স্মারকলিপির অনুলিপি দিয়েছিলেন। বিষয়টা হাস্যকর মনে হলেও সত্য। 

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ আগস্ট রাতে মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে ৩ নভেম্বর তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলটি। কিন্তু দলে ফিরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে এই প্রক্সিহোতা। ফলে তাকে গতকাল রাতে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত থাকায় এ পর্যন্ত তার নামে তিনটা মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার নগরের মতিহার থানায় এই নেতার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। একটি পাবলিক পরীক্ষা আইনে, অপরটি অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসা আহসান হাবীব নামের এক শিক্ষার্থীকে ‘প্রক্সি চুক্তি' টাকার জন্য তুলে নিয়ে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা মোট আট জনের নামে পৃথক দুটি মামলা করেছে। 

মামলা হওয়ার পর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে মুশফিক তাহমিদ তন্ময় সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। মুখের বয়ান ছাড়া জিরো পার্সেন্ট সম্পৃক্ততা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে নিজের ফাঁসি নিজেই কার্যকর করব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিক তাহমিদ প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৭ সালে। সেবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখার গোপন প্রতিবেদনের তালিকায় তার নাম আসে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ৪৪ জন মাদক ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করে এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এই তালিকার ১৬ নম্বরে তন্ময়ের নাম ছিল।

এসময় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসাব সামনে আসে। তাতে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ২০০ টাকা জমা দিয়ে রাবির অগ্রণী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন তন্ময়। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ‘মুশফিক তাহমিদ তন্ময়’। এই অ্যাকাউন্টে ২০১৭ সালের ৭ই মার্চ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত তার হিসাবে ৪২ লাখ ২৪ হাজার ৭৫৮ টাকা জমা হয়। এ টাকা দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছে। তবে সব টাকা তিনি তুলে নেন। 

তবে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আমি ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি খুলি। এতে ম্যাক্সিমাম টাকা আমার এক ফ্যামিলি থেকে ঢুকতো। আমি সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করি। সেটা কি আপনারা জানেন? তবে তিনি কী ধরনের ব্যবসা করেন এমন উত্তরে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। 

তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে একটি ফ্যামিলি থেকে টাকা দেওয়ার কথা বললেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ৭ মার্চ সুন্দরগঞ্জ থেকে তার হিসাবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা হয়। একই বছরের ৫ নভেম্বর মাওনা বাজার থেকে ১ লাখ, একই স্থান থেকে ৯ নভেম্বর ৫০ হাজার, ১৩ ডিসেম্বর মনিরামপুর থেকে আজিজ ২ লাখ, ২০১৮ সালে পোড়াদহের মাহফুজ ৫০ হাজার, ২৬ এপ্রিল পোড়াদহ থেকে মাহফুজ আলামিন ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা পাঠান। আপেল পাঠান ৫০ হাজার। জলঢাকা থেকে ৪ নভেম্বর ৫০ হাজার টাকা ঢুকেছে তার হিসাবে।

২৮ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট শাখা থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঢুকেছে। ১৯ নভেম্বর কোটালীপাড়া থেকে ১ লাখ, ২০ নভেম্বর জলঢাকা থেকে ৫০ হাজার, ২২ নভেম্বর সুন্দরগঞ্জ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঢোকে। ২৭ নভেম্বর জলঢাকা থেকে ১ লাখ টাকা, ১১ ডিসেম্বর জলঢাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঢুকেছে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।

২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি নীলফামারী থেকে ১ লাখ, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজাপুরহাট থেকে ৬০ হাজার, ১০ এপ্রিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর ৬০ হাজার টাকা, ১৯ অক্টোবর রমনা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২৩ ডিসেম্বর আরটিজিএসের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা আসে।

২০২০ সালের ৯ নভেম্বর মেডিকেল শাখা ৫০ হাজার, ১৯ নভেম্বর একই স্থান থেকে আরও ১ লাখ টাকা, ২২ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও থেকে ৮৫ হাজার, ২০২১ সালের ২ মে সুন্দরগঞ্জ থেকে ৩ লাখ টাকা, ১৯ জুলাই উলিপুর শাখা থেকে ৫০ হাজার ৩০০ টাকা জমা হয়। ২০২২ সালের ১২ জুন সুন্দরগঞ্জ থেকে ২ লাখ, ১৪ জুন একই স্থান থেকে আরও ২ লাখ, ২৬ জুন ১ লাখ ১০ হাজার, ২৭ জুন বাস টার্মিনাল থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার, ২৮ জুন একই স্থান থেকে ১ লাখ ২০ হাজার, ১৮ জুলাই সুন্দরগঞ্জ থেকে ১ লাখ টাকা তন্ময়ের হিসাবে ঢোকে। এর বাইরেও আরও অনেক ছোট ছোট অঙ্কের টাকা তার হিসাবে জমা হয়েছে। তবে এই টাকা সঙ্গে সঙ্গে তিনি তুলে নেন।

গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার উল্লেখ করে বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার ইমেজ ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। সবকিছুর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। আমি শক্তিশালী ক্যান্ডিডেট হওয়ায় তারা আমাকে সরাতে চাই যাতে আমি পরবর্তী কমিটিতে কোনো দায়িত্বে না আসি। তারা চায় তাদের মাই ম্যান থেকে রাবি ছাত্রলীগের পরবর্তী কমিটির দায়িত্বে আসুক। মূলত এই কারণেই আমার নামে এসব মিথ্যা কথা ছড়ানো হচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, সংবাদ সম্মেলনে তন্ময় আমার এবং সভাপতির (গোলাম কিবরিয়া) বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে-তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হয়েছে, তাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে জানানো হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তদন্ত করে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করেছে।

রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা মেনে চলতে আমরা বাধ্য। প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তন্ময় এর আগেও বহিষ্কার হয়েছিল। পুনরায় সে আবার অপকর্মের দায়ে গতকাল আবার স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার বিষয়ে অবগত ছিলেন। ফলে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরবর্তীতে কেউ এমন অপকর্মে যুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044381618499756