‘মবের মুল্লুক’ আর কতোদিন - দৈনিকশিক্ষা

‘মবের মুল্লুক’ আর কতোদিন

মাছুম বিল্লাহ |

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেনো সেই আগের খেলায়ই মেতে আছে! আদব-কায়দা শেখানোর নামে রুমে নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় টর্চার করা। শেখ হাসিনাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি বলে দে মাইর! ছাত্রলীগের মিছিলে আসতে বিলম্ব হয়েছে লাগা মাইর! কাউকে পছন্দ হচ্ছে না- সবার সামনে অমানবিক শাস্তি! যেনো দেশে কোনো আইন নেই, নিজেরাই আইন। নিজেদের যা ইচ্ছে তাই করবে। কাউকে সন্দেহ হলে ধরে অমানবিক নির্যাতন। এর কোনো পরিবর্তনই কি হবে না?

 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বহু বছর আগে থেকেই কারাগার বানিয়ে রাখা হয়েছে, ভয় ও আতঙ্কের জায়গায় পরিণত করা হয়েছে। এ থেকে জাতিকে মুক্তি দিতেই হবে। আমার স্পষ্ট মনে আছে- নব্বই দশকের দিকে কোনো রিকসাওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে এমনকি ক্যাম্পাসে যেতে চাইতো না। অনেক অনুনয় বিনয় করে কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসতো, ‘ওখানে খুব ভালো মানুষরা থাকে তো, আমাদের ভাড়া তো দেয়ই না বরং আমাদের কাছে যা কিছু থাকে তা নিয়ে উল্টো আমাদের লাথি ও ঘুষি মেরে তাড়িয়ে দেয়’। যারা গাড়িতে চলাফেরা করেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাড়ি ঢোকাতে সাহস পান না। কারণ, কখন কে কি করে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, এখানে তো বিচার নেই। পুরো ক্যাম্পাসই ’মগের মুল্লুক’, যা এখন  পুরো ‘মবের মুল্লুক’ অর্থাৎ উন্মত্ত জনতার চর হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে!

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে এক যুবককে নৃশংসভাবে মারধর করে একদল শিক্ষার্থী। যেনো পৈশাচিক উল্লাস! পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এটা কি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর কাজ? এটা কি সেই সব শিক্ষার্থী, যারা নিজেদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বৈরাচারকে দেশ ছাড়া করেছেন, দেশের মানুষকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছেন? এরা কি সেই শিক্ষার্থী, যারা দেশের মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন? এরা কি সেই শিক্ষার্থী যারা পুরো দেশটাকে কারাগার বানানো হয়েছিলো, আয়নাঘর বানানো হয়েছিলো সেই জাহান্নাম থেকে মুক্তমনের মানুষদের, শিক্ষক, ছাত্র, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে মুক্ত করেছেন? নিশ্চয়ই না। তাহলে এরা কারা? এদেরকে অবশ্যই চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে, কোনোভাবে ছাড় দেয়া যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় হবে সবচেয়ে উন্মুক্ত জায়গা। মানুষ বিপদে পড়লে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে যেতে চায়, আমরা সেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চাই। আমরা কোনোভাবে চাই না ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল বা অমুক দলের দখলে ওমুক হল, ওমুক বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে। যদি তাই হয় তাহলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থী, দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী, খেটে খাওয়া মানুষের ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা নেয়ার আশায় আসেন। তারা মহান আদর্শ শিখতে আসেন। কিন্তু ক্যাম্পাসের পরিবেশ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিলো, এখানে এসে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক দুষ্ট রাজনীতিতে তাদের জড়াতে হয়, না হলে সিট পাওয়া যায় না, ডাইনিং-এ ক্যানটিন খাবার খাওয়া যায় না, নিরাপদে ক্যাম্পাসে হাঁটাচলা করা যায় না। 

 

পড়াশোনা উধাও, মান-সম্মান উধাও! বড় ভাই ছোটভাই সম্পর্ক উধাও! শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক বিষাক্ত! এগুলো আমরা আর চাই না। আমাদের শিক্ষকেরা বলতেন, তাদের সময়ে কোনো মেয়ে বিপদে পড়লে বিম্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খুঁজতেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খুঁজতেন যে সেখানে তারা নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন। আর এখন মেয়েরা ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্ক্ষিার্থীদের কাছে যান না, পারত পক্ষে ক্যাম্পাস ও হল থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন। কারণ, তারা জানেন, এখানে ধর্ষণের ‘সেঞ্চুরি’ করা হয়। এই কালচার তো পরিবর্তন করতেই হবে, নাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান্ত্রিক মানুষ তৈরি করে লাভ কী? মানবতাবিহীন মানুষ তৈরি করে লাভ কী? সন্ত্রাসী বানানোর জন্য তো বিশ্ববিদ্যালয় নয়! সেটি যারা করেছিলেন তাদের পদাঙ্কই যদি অনুসরণ করতে হয় তাহলে এতো রক্ত ঝরানোর, এতো প্রাণনাশের, এতো মানুষের অঙ্গহানির কি দরকার ছিলো?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এক প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতাকে প্রহার করে করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ কোনো সভ্যতা? ওপরে যে ঘটনাগুলোর উল্লেখ করেছি সেগুলো ছাত্রলীগই করতো। অনেকে ইচ্ছায়, অনেকে অনিচ্ছায়, অনেকে পার্টির জোর দেখানোর জন্য, অনেকে ক্ষমতার লোভে, অনেকে রাজনীতির বাতাসে বিষাক্ত হওয়ার কারণে, কেউবা এসব করতো নিতান্ত বদভ্যাসের কারণে। তাদের সময় বিরোধী কোনো শিক্ষার্থীর স্থান ছিলো না ক্যাম্পাসে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সব সময় তটস্থ থাকতে হতো তাদের ভয়ে। কিন্তু তাই বলে আমরা কি সেই আগের কালচারই রক্ষা করে চলবো? সেটিতো  হতে পারে না।

তাহলে কোথায় পার্থক্য? মনের ভেতর প্রচুর ক্ষোভ জমে আছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেটি আমরা বুঝি। কিন্তু সেটিতো ভালোবাসা দিয়ে জয় করা যায়। কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে কেনো? এই নৈরাজ্য যাতে আর কোথাও না হয় সেজন্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীকে সর্বাত্মক দৃষ্টি রাখার জোর আহ্বান জানাচ্ছি। এ দেশ আমাদের সবার। 
আর শিক্ষার্থীদের রাজনীতি হতে হবে পরিশীলিত ও আদর্শের, চর দখলের নয়।

 

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030770301818848