পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে যুদ্ধ ছাড়া সবকিছু করছি। বিকল্প সব ব্যবস্থা উন্মুক্ত রেখেছি। আমাদের বিশ্বাস আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারবো। একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়ার চেষ্টা করছি। অনেকে তাতে বাধা দিচ্ছে। প্রকল্পে শুরু হলে নিজেদের বাড়িঘরে যেতে পারবেন রোহিঙ্গারা।’
শনিবার (৮ জুলাই) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কূটনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস থেকে অনুরোধ পেলে বাংলাদেশ সদস্য হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনুরোধ পেলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। আমরা আরেকটি জানালা খুলে দিতে চাই। এরই মধ্যে আমরা ব্রিকসের ব্যাংকে যোগ দিচ্ছে। আমাদের অনেক রিসোর্স, বিনিয়োগ দরকার। সেক্ষেত্রে এটি আরেকটি বিকল্প হতে পারে। কাজেই তারা দাওয়াত দিলে আমরা যোগদান করবো।
নির্বাচন নিয়ে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফারনান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় আমরা সংলাপ দেখেছি। তখন তিন দফা সংলাপ হয়েছিল। এখন কী নিজেদের মধ্যস্থতায় সংলাপ হবে, নাকি তৃতীয় কোনো পক্ষের অপেক্ষায় আছি। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো সংলাপে অগ্রগতি হয়েছে বলে আমি জানি না। এসব বিষয়ে দলের সেক্রেটারি কথা বলতে পারবেন। সংলাপের মাধ্যমে আমাদের আগে খুব একটা অর্জন হয়েছে বলে ধারণা নেই।
বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, তা কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এটি তাদের বক্তব্য। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।
দুর্নীতি আমরা কমিয়ে আনতে পারছি কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আয় বৈষম্য বেড়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অনেক দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু হলে এমনটি ঘটে। এ ক্ষেত্রে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ আমাদের দেশে আছে। কিন্তু তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা ভালো ফল পাচ্ছি না।
এ সময়ে তিনি আরও বলেন, কিছু লোক ধনী হলে, তারা বিনিয়োগকারী হতে পারবে। কিন্তু ধনী না হলে সেটা সম্ভব না। প্রতিটি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, কিছু লোক ধনী। আর তারাই সেখানে বড় বিনিয়োগকারী। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে সেটা হচ্ছে। নামকরা অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রবৃদ্ধির জন্য কিছু কিছু আয় বৈষম্য অপরিহার্য। তবে, বেশি হলে সেটি খারাপ। যুদ্ধ হলেও আয় বৈষম্য বাড়ে।
নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে কী প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন? ইংল্যান্ডে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী কী সরে দাঁড়ান? দুনিয়ার কোথাও কী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আছে? পাকিস্তানে বোধহয় কিছুদিনের জন্য ছিল। এগুলো অনর্থক আলোচনা। আমাদের শাসনতন্ত্র ও আইনানুযায়ী আমরা স্বচ্ছ, সুন্দর নির্বাচনের আয়োজন করবো।
রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সম্মানজনক সমাধানে পৌঁছাতে পারিনি। এটি কী আমাদের ব্যর্থতা না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা এমন সময় আশ্রয় দিয়েছিলাম, যখন তারা নিপীড়িত হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আর মিয়ানমারের একটা অভ্যাস আছে, আগেও তারা লোকজনকে বিতাড়িত করেছে, সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকে। মিয়ানমারে প্রায় ১২৫টি নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী আছে। রোহিঙ্গাদের নিজেদের বলে স্বীকার করে না মিয়ানমার। ১৯৬৪ সাল থেকে ওদের দুর্গতি শুরু হয়েছে। এর আগে তারা মিয়ানমারের মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিল।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার আমাদের বলেছে যে তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে। তারা সত্যতা যাচাই করে নিয়ে যাবে। কিন্তু তারা কথা রাখেনি। এরই মধ্যে তাদের সরকারও পরিবর্তন হয়েছে। তারা কখনো বলেনি যে নেবে না। যে কারণে আমি আশাবাদী, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া হবে। তবে, তারা যাতে না যায়, সে জন্য বিভিন্ন শক্তি ও অন্যান্য গোষ্ঠী পাঁয়তারা করছে। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন কিছু বোঝানো হচ্ছে। যা দুঃখজনক।
অধিকাংশ রোহিঙ্গাই নিজ দেশে ফেরত যেতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানেই ওদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করছি। এখনো পুরোপুরি সফল হইনি। আমরা বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোতেও বিষয়টি তুলেছি। নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তুললেও কেউ প্রশ্ন তোলেনি। আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এখনো কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।