মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বিএনপি-জামায়তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দাবি করে বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষা পরিবারের অভিভাবকের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ। তিনি বলেছেন, মাননীয় মন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। কিন্তু তিনি অভিভাবকের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। তার ওই বক্তব্য শুনে সারাদেশের শিক্ষক সমাজ ব্যথিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষা বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার লাইভে যুক্ত হয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ ও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধার বৈষম্য নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও প্রাচীন শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ।
অধ্যক্ষ কাওছার আরো বলেন, মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন সরকারের বিরুদ্ধে নাকি আমরা কথা বলি। আমরা নাকি সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই না। সরকার নাকি আমাদের সহযোগিতার জন্য ডেকেছে কিন্তু আমরা যাইনি। ইভেন, আমরা যারা আন্দোলনে ছিলাম তারা নাকি বিএনপি-জামায়তের আন্দোলনে যাওয়ার জন্য রাজপথে বসেছি। আমাদের অভিভাবক মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমরা যারা রাজপথে ছিলাম তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক। আপনি যতো কথায় বলুন না কেন আপনি আমাদের বিরোধী অবস্থানে নিতে পারবেন না। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অভিভাবক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন আমরা কারা, আর এই আন্দোলনের সঙ্গে কারা যুক্ত আছেন।
তিনি বলেন, ২২ দিনের আন্দোলনের বিএনপি বা জামায়াতের ষড়যন্ত্রে পা কেউ দেয়নি। আমরা যারা নেতৃত্ব দিয়েছি, তাদের কোনদিনও বিএনপি বা জামাতের সঙ্গে সখ্যতা ছিলো না। ছাত্র জীবন থেকে কর্মজীবন শুধু না, কখনোই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেসেজ আছে। সেজন্যই আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শেষে সন্তোষজনক সমাধান নিয়ে রাজপথ থেকে ক্লাসে ফিরে গিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আন্দোলনে আমাদের কোনো নেতা সরকারবিরোধী কোন বক্তব্য দেননি। সরকারকে সহযোগিতা করতে চায় না এমন কোন কথা বলেননি। কারণ আমাদের অনেকেই আছেন যারা মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতা।
বিটিএ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার আমাদের ডেকেছেন আমরা যাইনি এই কথাটাও সঠিক নয়। আমাদের ডিজি মহোদয় দেখেছেন আমরা গিয়েছি। আমাদের মন্ত্রী মহোদয় ডেকেছেন আমরা গিয়েছি। আমাদের আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামছুন্নাহার চাঁপা আপা আমাদের ডেকেছেন আমরা গিয়েছি, উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের ডেকেছেন আমরা গিয়েছি। সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের ডেকেছে আমরা গিয়েছি ও সুস্পষ্টভাবে সাড়া দিয়েছি। তাই কোনো অবস্থাতেই মন্ত্রী মহোদয়ের ওই বক্তব্য শিক্ষক সমাজ মেনে নিতে পারছে না।
আরো পড়ুন : বৃহস্পতিবারের শিক্ষক সমাবেশ নিয়ে যা বললেন শেখ কাওছার আহমেদ
'পাশাপাশি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আরেকটি কথা বলেছেন, আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করি তাই আমাদের কোলে নিয়ে নাচার দরকার নাই। একজন অভিভাবক হিসেবে, একজন মন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ উনার মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনে অভ্যস্ত না, একজন মন্ত্রীর মুখ থেকে এ ধরনের সমাজ প্রত্যাশা করে না। উনি শিক্ষক সমাজের অভিভাবক। শোক দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়ে এরকম একটি কথা.....। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আপনি আমাদের অভিভাবক। আপনার কথাগুলো আপনি যদি রিপিট করে শুনেন তাহলেই বুঝতে পারবেন আপনি আমাদের কোন জায়গাটায় আঘাত করেন। আপনার কাছ থেকে শিক্ষক সমাজ আঘাতের কথা শুনতে চায় না, সহযোগিতার কথা শুনতে চায়', যোগ করেন অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ।
তিনি বলেন, মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী হলে শিক্ষকদের সব দাবি-দাওয়া পূরণ করবেন। এটি আমাদেরও প্রত্যাশা। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে এ ধরনের প্রত্যাশার কথা শুনতে চাই। আমি মনে করি আমাদের দাবি যৌক্তিক। আপনি আমাদের দাবির পক্ষেই কথা বলেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি ওইদিনের অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রসঙ্গে বলেন, যারা সরকারি আছেন তাদের একরকম দাবি, যারা এমপিওতে আছেন তাদের একরকম দাবি, যারা নন-এমপিও তাদের একরকম। পুরো জিনিসটা বুঝে গুছিয়ে, জটিলতাগুলোকে দূর করে তারপর করতে হবে। হ-য-ব-র-ল নিয়ে পারবেন? আমরা দুটি কমিটি করে দিয়েছি, দু’দিনের একটি ওয়ার্কশপ করলাম। সবাইকে ডাকলাম। কিন্তু আমাদের নামে কদর্য কথা বলছেন, কুৎসা রাটাচ্ছেন তাদেরকেও বললাম আসেন। কিন্তু তাদের মধ্যে মেইন লোক (ওয়ার্কশপে) ছিলেন না। তাদের সহযোগিতা দেয়ার জন্য সরকার তাদের ডেকে নিয়ে আসছে সেখানেও তারা আসতে রাজি না। তখন বিএনপি-জামায়াতের একটা সমাবেশ ছিলো। তারা সেই সমাবেশে থাকবেন। তাদের নিয়ে নাচানাচি তো দরকার নেই। শিক্ষর্থীদের জিম্মি করে তারা দাবি আদায়ের মৌসুম মনে করে, বিরোধী দলের তথাকথিত আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগাবার জন্য তারা রাস্তায় বসবে, সেটাকে প্রশ্রয় দেবার কোনও কারণ নেই। ওইদিন সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।