বাংলা একাডেমিকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্য সংস্কার কমিশন করা হচ্ছে। আগামী মার্চেই এই কমিশন হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
জানা গেছে, এই কমিশনের প্রধান লক্ষ্য হবে আমূল সংস্কার করে বাংলা একাডেমিকে একটি ‘চলমান প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত করা এবং তরুণদের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত করা।
এই কমিশন গঠন করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। তবে যাবতীয় সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে সরকার বলে জানান মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
চলতি বছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের তালিকা ঘোষণার পর কয়েকটি নাম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে তিনজনের নাম বাদ দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। তখন বাংলা একাডেমির পুরস্কার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সে সময় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছিলেন, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কারের সঙ্গে মন্ত্রণালয় বা আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নাই। আমাদের সরাসরি ভূমিকা আছে একুশে পদকের ক্ষেত্রে। তার পরও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমি এই পুরস্কার নিয়ে যে সমালোচনাগুলো হচ্ছে সেটা গ্রহণ করছি।’
আরও লিখেছিলেন, ‘একজন নারী লেখককেও খুঁজে না পাওয়া বিস্ময়কর। এ ছাড়া কিছু ক্যাটাগরিতে যে প্রশ্ন উঠেছে সেগুলোও অযৌক্তিক নয়। সময় এসেছে, এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের।’
গত ২৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছিলেন, ‘বাংলাএকাডেমির পুরস্কার পদ্ধতি, পরিচালন পদ্ধতিসহ সবকিছুই সংস্কার করা হবে, বাংলা একাডেমিকে কিভাবে সত্যিকারের চিন্তা চেতনার মননের প্রতীক করা যায়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, সংস্কার কমিশনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার চেষ্টা করছে মন্ত্রণালয়। কোনো একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কমিশন বলে যেন এটিকে চিহ্নিত করা না যায়, এজন্য নানা ঘরানার লেখক-বুদ্ধিজীবী, গবেষকের অংশগ্রহণে এটি গঠন করা হচ্ছে। এতে খ্যাতিমান লেখক-বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তরুণ চিন্তকরাও থাকতে পারেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, কমিশনে কারা থাকবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সময় হলে ঘোষণার মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক হলো। এমন ব্যক্তিকে পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, পুরস্কার নির্বাচক কমিটির সদস্যরাই যার বই পড়েননি। এরপর ফেলোদের দিয়ে বাছাই করার ক্ষেত্রেও ফেলোদের নানাভাবে ম্যানিপুলেট করার ব্যবস্থা করা হতো। এই জিনিসগুলোর মধ্যে সত্যতা ও ওপেননেস আনা হবে। সংস্কার কমিশন নিশ্চয়ই একটা পদ্ধতি বের করবে। তারা বাংলা একাডেমি পরিচালনা পদ্ধতির আমূল সংস্কার এবং পুরস্কার ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাজ করবে।’
সংস্কার কমিশনের কর্মপরিধি কতটা বিস্তৃত হতে পারে, জানতে চাইলে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘বাংলা একাডেমিকে একটি চলমান প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন তার সবই করবে কমিশন। চলমান প্রতিষ্ঠান বলতে বুঝাচ্ছি, এখন দেখলে দেখা যাবে, এখন যারা তরুণ বা যাদের চিন্তা বাংলাদেশের নতুন চিন্তাকে প্রভাবিত করছে, তাদের কারো সঙ্গে বাংলা একাডেমির কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি তারা বাংলা একাডেমির সাধারণ সদস্যও না।’