২৪ এর স্মৃতি ধোয়ামোছার কাজ চলছে বলে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, সব দল দ্রুত ২৪ এর স্পিরিটকে ভুলে পুরোনো ধারায় ফিরে যেতে মরিয়া।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, কুয়েটে যা ঘটলো গতকাল সেটা কেবল আগামীর বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেমন হবে তার একটা স্ন্যাপশট মাত্র অথবা বলা যায় এইটা ছিল একটা ট্রেইলার। কত দ্রুত আমরা সেই চিরাচরিত পথে ফিরে যাচ্ছি তা ভাবলেই অবাক লাগে। কুয়েটে যা ঘটলো এইটা ২৪ এর অভ্যুত্থানে এত মানুষের রক্ত ও পঙ্গুত্বের সাথে বেঈমানি। অথচ ২৪ এর স্পিরিট বুঝতে সেই সময়ের নানা ভিডিও ও গ্রাফিতি দেখুন। তখন সুস্পষ্ট মেসেজ ছিল ক্যাম্পাসে দলীয় অন্ধত্ব, দখল দারিত্ব ও রং বদলে মোনাফেকির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, গত ৪০-৫০ বছর ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি করে কয়জন নেতা হয়েছেন বলেন তো? এই দলীয় রাজনীতি করে প্রতিপক্ষের সাথে মারামারি, চাঁদাবাজি, বক্তৃতায় মিথ্যা বলা, আবাসিক হল দখল করা, ক্যান্টিন ও অন্যান্য জায়গায় ফাও খাওয়া শেখা ছাড়া ছাত্র নেতৃত্ব কি শিখিয়েছে? এরা যখন পুলিশ হয়, আমলা হয়, শিক্ষক হয়, ট্যাক্স কর্মকর্তা হয় কেমন মানুষ হয় সেটা আজকের বাংলাদেশই তার প্রমাণ।
তিনি বলেন, কেমন ক্যাম্পাস চাই? এমন ক্যাম্পাস চাই যেখানে শিক্ষার্থীরা এমন সুশৃঙ্খলভাবে চলবে যে শিক্ষক না ছাত্ররাই কয়েকজন কর্মকর্তা সাথে নিয়ে তাদের আবাসিক হল চালাবে। তাতে শিক্ষকদের অনেক কর্মঘণ্টা বেঁচে যাবে এবং একই সাথে ছাত্ররা নেতৃত্ব শিখবে যা উন্নত বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়। কেমন ক্যাম্পাস চাই? এমন ক্যাম্পাস চাই যেখানে শিক্ষার্থীরা নানা বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান করবে, বিতর্ক করবে ও সকল মত ও ধর্মের মানুষের সাথে মিলেমিশে চলতে শিখবে।
কেমন ক্যাম্পাস চাই? এমন ক্যাম্পাস চাই যেখানে শিক্ষর্থীরা শিক্ষাবান্ধব নানা ইস্যুতে সোচ্চার হবে, দাবি জানাবে এবং তার আগে এইসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের মতামত জানবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানাবে, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বইয়ের দাবি জানাবে, ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়ায় উন্নত খাবারের দাবি জানাবে এবং উন্নত থাকার পরিবেশের দাবি জানাবে। দেশে কোথাও অন্যায় হলে দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। অন্যায়ের তো কোন দল নাই?
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে গিয়ে যদি বিভাজিত হতে শিখে তারা কিভাবে সমাজে অন্তর্ভুক্তির কথা বলবে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক কাজ হলো লেখাপড়া ও গবেষণা। এর বাহিরে তারা সমাজসেবা, খেলাধুলা ও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতে পারে। কোন অবস্থাতেই সংকীর্ণ দলান্ধ রাজনীতি করতে পারে না। বিশেষ করে ছাত্রাবস্থায়তো অবশ্যই না। এতদিন রাজনীতিবিদরা একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিল। এই মিষ্টি কথাগুলো আসলে ছিল ইরেজার। এখন ২৪ এর স্মৃতি ধোয়ামোছার কাজ চলছে। সব দল দ্রুত ২৪ এর স্পিরিটকে ভুলে পুরোনো ধারায় ফিরে যেতে মরিয়া।