রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তানজিউল ইসলাম জীবন এবং পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও পরীক্ষায় মার্ক টেম্পারিংয়ের অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। অভিযুক্তদের প্রশাসনিক সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি ও বরখাস্তের দাবিতে মশাল মিছিল এবং তাদের কুশপুত্তলিকায় জুতা মারার কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রক্টরের দেওয়া ‘বিতর্কিত বক্তব্য’ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে কৃষ্ণচূড়া সড়কে শিক্ষার্থীরা ব্যতিক্রমধর্মী এক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচিতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কুশপুতুল তৈরি করে। তাতে লেখা হয় ‘আমি নারীলোভী নিপীড়ক শিক্ষক’। ১৩ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. তানজিউল ইসলাম জীবনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়, যেখানে একজন ছাত্রীকে তিনি ফলাফল পরিবর্তন ও কথাবার্তা শিখিয়ে দিচ্ছেন বলে শোনা যায়।
এ ছাড়াও পরিসংখ্যান বিভাগের ড. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯ এপ্রিল যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যসচিব ও প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান জানান, ‘ফলাফল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
যৌন নিপীড়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখনো কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ড. তানজিউল ইসলাম জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে ড. রশীদুল ইসলামের মুঠোফোন একাধিকবার বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে, দিনভর কর্মসূচির পর সন্ধ্যা ৭টায় মশাল মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে প্রক্টরের দেওয়া বক্তব্যে ক্ষোভ জানান তারা। তাদের অভিযোগ, দোষীদের বাঁচাতেই দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তিনি ।
মশাল মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- অডিও ক্লিপ এবং সংশ্লিষ্ট অভিযোগসমূহের বিষয়ে ফরেনসিক পরীক্ষাসহ একটি নিরপেক্ষ ও গভীর তদন্ত পরিচালনা; তদন্ত চলাকালীন ড. মো. তানজিউল ইসলামকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান; তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে অধিকতর স্বচ্ছ, ডিজিটাল ও প্রযুক্তিনির্ভর করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম রোধে একটি শক্তিশালী একাডেমিক মনিটরিং সেল গঠন।
শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘শিক্ষকরা হচ্ছেন আস্থা ও আশ্রয়ের প্রতীক। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম, শিক্ষকদের মাধ্যমেই যৌন শিকার হচ্ছেন আমাদের বোনেরা। এই যৌন নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বেরোবি প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশন নিচ্ছে না কেন? যৌন নিপীড়নের সব ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই। এ জন্য যদি কঠোর কর্মসূচির জন্য ছাত্র-জনতা প্রস্তুত আছি।
জিম আক্তার বলেন, প্রক্টর স্যারের বক্তব্য আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক। আমাদের পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে দেখভালের দায়িত্ব তার। এ ধরনের মানসিকতা ও শব্দচয়ন অপেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান বলেন, ভিডিওটির কথাগুলো ভালো করে শোনেন আগে। এখানে আমি বুঝাতে চেয়েছি, যেসব আইডি থেকে ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো ফেক আইডি। ভিডিওতে মজা নেওয়া বলতে ফেক আইডি থেকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে লিখে মজা নেওয়াকে বোঝানো হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, নম্বর টেম্পারিং এবং যৌন হয়রানির বিষয়ে আমরা একটা নতুন অভিযোগ সেল গঠন করেছি। কেউ পরিচয় গোপন করতে চাইলে আমরা তার পরিচয় প্রকাশ না করেই অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে আমার একটা প্রেস কনফারেন্স করব।
অডিও ক্লিপের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীরা বিষয়টা তদন্তের জন্য আবেদন করলেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে আমরা এখনো কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।