সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা দ্রুত যোগদানের দাবি জানিয়েছেন। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে যোগদানগপত্র দেয়ার আগ মুর্হূতে ৬ হাজার ৫৩১ প্রার্থীর নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন তারা।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধনে এ দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে ফলাফল প্রকাশ করেছে। আর এতে করে আমরা ৬ হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। এটাই কি আমাদের অপরাধ? চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও যোগদান করতে না পারা কতটা কষ্টের তা কি বোঝেন আপনারা? সামাজিক ও পারিপার্শ্বিকভাবে আমাদের কতটা হেয় হতে হচ্ছে? পরিবারের সবার কাছে এখন নিজেদের মূল্যহীন মনে হচ্ছে। নিয়োগপত্র পাওয়ার পরও কর্মস্থলে যোগদান করতে না পেরে আজ রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হচ্ছে। এটা যে কতটা বেদনাদায়ক তা কেবল একজন ভুক্তভোগী বুঝতে পারবে।’
ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকেরই বয়স শেষ, তাদের আর কোনো চাকরিতে আবেদন করার সুযোগও নেই। তাদের জীবনের দায়ভার আসলে কে নেবে? কর্তৃপক্ষ কেন এর দ্রুত সমাধান করছে না? আমরা কার কাছে এর যথাযথ বিচার চাইবো? ফলাফল প্রকাশের দীর্ঘদিন পার হওয়ার পরও যোগদান করতে পারছি না। আমাদের একটাই দাবি দ্রুত এর সমাধান করে আমাদের যোগদানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ৬ হাজার ৫৩১ জন কেন নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? এই মুহূর্তে আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে। আমরা অনতিবিলম্বে যোগদান করতে চাই। মানববন্ধনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তৃতীয় ধাপের শতাধিক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র দেয়াসহ এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট। ওই নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ হন।
এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৯ নভেম্বর রুলসহ এ আদেশ দেন। ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগবঞ্চিত ৩০ প্রার্থী নভেম্বরের মাঝামাঝি রিট করেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১১ নভেম্বরের এ-সংক্রান্ত আদেশ অনুসারে নির্বাচিত প্রার্থীদের অনুকূলে ২০ নভেম্বর নিয়োগপত্র ইস্যু করার কথা ছিলো। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে তা স্থগিত থেকে যায়। রুলে ৩১ অক্টোবর ফল প্রকাশের বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ বিষয়ে ১১ নভেম্বরের নির্দেশনা–সংবলিত স্মারক কেনো আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পরে ৯ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত রুল আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে করা আবেদনের (লিভ টু আপিল) শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেয়া হয়।
জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ২৩ জুলাই কোটাপদ্ধতি সংশোধনের পর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ অক্টোবরের জারি করা পরিপত্রসহ আগের এ-সংক্রান্ত সব পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপন বা আদেশ রহিত করা হলো। ফলে আগের কোনো আদেশ বহাল থাকছে না। অথচ ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুসরণ করা হয়েছে। এ অনুসারে নারী কোটা ৬০ শতাংশ, পোষ্য কোটা ২০ শতাংশ, ৪ শতাংশ অন্যান্য কোটা ছিলো। যে কারণে ওই রিটটি করা হয়। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়ে নিয়োগের কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। ফলে আগামীকাল নিয়োগপত্র ইস্যু করা যাবে না।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ৬ হাজার ৫৩১ জন প্রার্থীকে নির্বাচন করে গত ৩১ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৩১ অক্টোবরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুসরণ করে উপজেলাভিত্তিক মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রার্থী নির্বাচন করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১১ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ আদেশ–সংবলিত নির্দেশনা জারি করে।