প্রাথমিকে নিয়মিত টাইম স্কেল ও দু’বার গ্রেড বৃদ্ধির দাবি | স্কুল নিউজ

দৈনিক আমাদের বার্তার গোলটেবিল প্রাথমিকে নিয়মিত টাইম স্কেল ও দু’বার গ্রেড বৃদ্ধির দাবি

সব সরকারের আমলেই অবহেলার শিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাই বৈষম্য দূরীকরণে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের জন্য নবম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের জন দশম গ্রেড নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনের নেতারা।

#স্কুল #টাইম স্কেল #শিক্ষক

দেশের প্রায় ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪ হাজার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত প্রধান শিক্ষক নেই। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে নেই কোনো টাইম স্কেল। কখনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আবার কখনো আদালতের ওপরে ছেড়ে দিয়ে রাখা হয়েছে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যদূরীকরণ ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো। একের পর এক সরকার বদল হয়, কিন্তু শিক্ষকদের ভাগ্য বদলায় না। সব সরকারের আমলেই অবহেলার শিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাই বৈষম্য দূরীকরণে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের জন্য নবম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের জন দশম গ্রেড নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনের নেতারা।

প্রাথমিকে নিয়মিত টাইম স্কেল ও দু’বার গ্রেড বৃদ্ধির দাবি

প্রাথমিকে নিয়মিত টাইম স্কেল ও দু’বার গ্রেড বৃদ্ধির দাবি

শনিবার প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণসহ মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় করণীয় শীর্ষক গোলটেবিলে বক্তারা এসব দাবির কথা বলেন। রাজধানীর মগবাজার দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তার আয়োজনে আমাদের বার্তার মিলনায়তনে এই গোলটেবিল অনুষ্ঠিত হয়।

'প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণসহ মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় করণীয়' শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক শিক্ষাডটকম এর সম্পাদকীয় উপদেষ্টা মো. সিদ্দিকুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল কাশেম ফজলুল হক। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, '১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে পিটিআই ট্রেনিং করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেছিলাম। ৩৫ বছর চাকরি করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে গিয়েছি। প্রাথমিকের শিক্ষকদের স্বীকৃতির জন্য ১৯৬৮ থেকে যে আন্দোলন শুরু করেছিলাম, সেই আন্দোলনের কারণেই ৭৩-এ সফলতা আসে, প্রাথমিক শিক্ষকদের সরকারি মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সময়ে সেখানে আর্থিক হিসেব মোটামুটি ঠিকই ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে চরম বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।'

বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে এই বর্ষীয়ান শিক্ষক নেতা আরো বলেন, 'বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, যাদের আন্দোলনের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি সরকারি হয়েছে, সেটা হয়েছে শুধু ঐক্যের কারণে। যদি বর্তমান শিক্ষকরা ঐক্যে না আসেত পারেন, তাহলে কোনো দাবি আপনারা পূরণ করতে পারবেন না। আর এই অন্তবর্তী সরকার আপনাদের সব দাবি পূরণও করতে পারবে না। তবে আপনারা এই মুহূর্তে সব দাবিদাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে উত্থাপন করেন, অফিসে দিয়ে রাখেন। তাহলে নির্বাচিত সরকার আসার সঙ্গে সঙ্গে দাবি বাস্তবায়ন করাতে পারবেন।'

প্রাথমিকে নিয়মিত টাইম স্কেল ও দু’বার গ্রেড বৃদ্ধির দাবি

কাজী আবুল কাশেম ফজলুল হকের কথায় সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গোলটেবিলের সঞ্চালক ও ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক মাছুম বিল্লাহ বলেন, ' এই জাতীয় দাবি দাওয়া পাস করতে হলে সংসদ লাগে, জনপ্রতিনিধি লাগে, অন্তর্বর্তী সরকার সব দাবি পূরণ করতে পারে না। তবে বর্তমানে যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত, তাদেরকেই এই আন্দোলন করতে হবে, তাদেরই দাবি আদায় করতে হবে, দাবির যৌক্তিকতা উত্থাপন করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আজকে সহকারী শিক্ষকদের যে দশম গ্রেড, তা শুধু বেতন বৈষম্য নয়, এটা শিক্ষক সমাজের মর্যাদার লড়াই। শুধু প্রাথমিক নয়, মাদরাসা, উচ্চ বিদ্যালয়সহ প্রায় সব শিক্ষক আজ মর্যাদা বঞ্চিত। সব সরকার ও সুধী সমাজের মাঝে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়ার অভিলাষ। বিশ্বের প্রায় সব দেশে শিক্ষকদের মর্যাদা প্রথম শ্রেণি। আর বাংলাদেশে শিক্ষকদের মর্যাদা থার্ড ক্লাস। একারণে শিক্ষকরা বৈষম্য দূরীকরণ ও মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। বৈষম্য নিরসনের প্রত্যয়ে শিক্ষকদের দাবির প্রতি অন্তবর্তীকালীন সরকারের নৈতিক সমর্থন থাকা যৌক্তিক। পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমন্বয়করাও শিক্ষকদের বৈষম্য ও মর্যাদার দাবিতে সোচ্চার। এ পথের চ্যালেঞ্জ জুলাই অভ্যুত্থানে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সরকারের অনুগত কতিপয় কর্মকর্তাসহ তাদের অনুচররা।

শিক্ষক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, 'আজ সারাদেশের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য। ঐক্যের ঘাটতি শিক্ষক নেতাদের মাঝে। সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড কোনো সহকারী শিক্ষক গ্রুপ বা দলের একক প্রত্যাশা নয়। এ প্রত্যাশা প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষকের। শিক্ষকের মর্যাদা উন্নত করার প্রত্যাশা পুরো শিক্ষক সমাজের-- জাতি তথা রাষ্ট্রের। এজন্য শিক্ষকদের ঐক্যের পাশাপাশি নেতৃবৃন্দের ঐক্য প্রত্যাশা করছি।'

প্রাথমিকে নিয়মিত টাইম স্কেল ও দু’বার গ্রেড বৃদ্ধির দাবিক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক মাছুম বিল্লাহর সঞ্চালনায় শুরুতেই বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম তোতা। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের সব চাকরিজীবীই টাইম স্কেল পেয়েছেন। কিন্তু ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পে-স্কেলের পর প্রাথমিকের শিক্ষকদের আর কোনো টাইম স্কেল দেওয়া হয়নি। ১০ বছরে একটা এবং ১৬ বছরে আরেকটা উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার কথা থাকলেও, তা দেওয়া হয় নি।'

জাতিকে সুশিক্ষিত করতে হলে, প্রাথমিক শিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর তাগিদ দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষকদের পেটে যদি ক্ষুধা থাকে, তাহলে তারা কীভাবে প্রাথমিক শিক্ষাকে বুনিয়াদি শিক্ষা হিসেবে গড়ে তুলবেন? যখনই শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে কথা বলেছি, তখনই সাসপেন্ড হয়েছি। ৫ আগস্টের পর এখন আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, অন্তবর্তী সরকার এসেছে, উনারা আসার পরও একটা কমিটি করে দিয়েছেন। আমাদের একটা দাবিই ছিল, সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের নবম গ্রেড। কিন্তু উনারা যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের কথা বলা হয়েছে। তবে প্রধান শিক্ষকদের জন্য দশম গ্রেডের বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়ে রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা হতাশ। বিগত দিনে যা ছিল, এখনও তাই দেখতে পাচ্ছি আমরা। আমলাতন্ত্রে ফ্যাসিস্ট জনবলই বসে আছেন আগের জায়গায়।

প্রাথমিক শিক্ষক টিফিন ভাতাকে প্রহসন ও অসন্মানজনক উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘দৈনিক ৬ টাকা টিফিন ভাতা দেওয়া হয় শিক্ষকদের, মাসে মোট ২০০ টাকারও কম। বর্তমান বাজারের বিবেচনায় এই খুবই অমর্যাদাকর। বেতন বৈষম্য ও অমর্যাদার কারণে মেধাবীরা প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েও বেশিদিন থাকতে চান না। অন্য চাকরিতে চলে যান। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া দরকার। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষার ভিত শক্ত না হলে, এক পর্যায়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে।'

দেশের ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪ হাজার প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, '২০১৫ থেকে প্রাথমিকে প্রমোশন নাই। আমাদের কষ্ট লাগে। পুলিশের এসআই, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, কৃষি উপসহকারী ও নার্সরা এসসি, এএইচএসসি ও ডিপ্লোমা পাস করে দশম গ্রেডে চাকরি করেন। অথচ মাস্টার্স পাস প্রাথমিক শিক্ষকরা থার্ড ক্লাস! আবার ন্যায্য দাবি জানাতে গেলেও জলকামান, লাঠিচার্জ, পুলিশ দিয়ে প্রতিহত করা হয়। এমনকি স্মারকলিপি দিতে গেলেও বরখাস্ত হয়ে যাই আমরা।’

তিনি বলেন, বেতনের এতো বৈষম্য থাকলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে? আমলারা ১ থেকে ১০তম গ্রেড পর্যন্ত মনের মাধুরী মিশিয়ে বেতন বাড়িয়েছেন, আর ১১ থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত বেতন বাড়ানো হয়েছে ৩শ টাকা থেকে ২-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই বৈষম্যের শেষ কোথায়?

তিনি আরো বলেন, 'আমরা শ্লোগানে বলি- শিক্ষা নিয়েই গর্ব দেশ, আমাদেরই বাংলাদেশ; কিন্তু বাস্তবতা হলো, শিক্ষকদের উন্নয়ন শুধু শ্লোগানেই আটকে আছে। দেশে যতো সরকার এসেছে, আমরা কোনো দিন তাদের আন্তরিকতা দেখতে পাইনি। তিয়াত্তরে ৩৭ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক সরকারিকরণ বাদে বাকী সব দাবি আন্দোলনের মাধ্যমেই পেতে হয়েছে ।

প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের সবচেয়ে ‘দুর্ভাগা’ অভিহিত করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকরা বেশি দুর্ভাগা। সহকারীরা সুযোগ পেলে প্রধান শিক্ষক হন। সেটাও বর্তমানে নেই। আমাদের দাবি তো এই একটাই ছিল। শিক্ষক নিয়োগ হবে একটা পদে, সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এরপর প্রমোশন হতে হতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক পর্যন্ত যাওয়ার সিস্টেম থাকতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের তহসিলদাররা পর্যন্ত হয়ে গেলেন সহকারী ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা, তাহলে শিক্ষকদের প্রতি কেন এই বৈষম্য? ’

বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নিয়ম মানা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটা নিয়ম আছে, এক কিলো মিটারের মধ্যে অন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, আমার স্কুলের আশেপাশে কয়েকটি মাদরাসা আর কিন্ডারগার্টেন আছে।

‘শিক্ষকরাই শিক্ষকদের সমস্যা দূরীকরণের অন্যতম প্রতিবন্ধক। এমন মন্তব্য করে মোশাররফ হোসেন বলেন, 'শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণে আমাদের ঐক্য প্রয়োজন। দেশে সহকারী শিক্ষকদের সমিতি এখন ১০টার বেশি, প্রধান শিক্ষকদের সমিতিও আছে ৪-৫টা। এই বিভক্তির কারণে আজ কোনো দাবিই আর পূরণ হয় না।’

তিনি বলেন, সচিব ও মহাপরিচালকরা এলে তাদের খুশি করানোর জন্য ও নিজেকে জাহির করাতে ফুলের মালা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শিক্ষকরা। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি শিক্ষক সমাজের। তাই এই শিক্ষকদের বৃহত্তর স্বার্থে এই ঐক্যের ঘাটতি দূর করা প্রয়োজন, যত অনিয়ম আছে তাও দূর হোক। আমাদেরকে বলা হয়, সহকারী শিক্ষকদের দশমগ্রেড দিলে প্রধান শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হবেন, এটি ভুল কথা। এখানে কেউ কারো প্রতিযোগী নয়, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা একে অপরের সহায়ক হিসেবে কাজ করেন।'

শিক্ষকদের দায়িত্ববান হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের পাস-ফেলের কারণ খুঁজতেন, বিশেষ করে গণিক ও ইংরেজিতে, তাহলে অভিভাবকরা শিক্ষকদের প্রতি আরো আস্থাবান হতেন। এমনকি শিক্ষকদের যেকোনো দাবির প্রতিও একাত্মতা প্রকাশ করতেন অভিভাবকরা। তাই শিক্ষকরা এসব বিষয়ে গবেষণা করে, শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিশ্লেষণ করে, তাদের ফেল করার কারণ যদি বের করেন, এরপর তা থেকে উত্তরণের উপায় যদি রাষ্ট্রকে সুপারিশ করেন, তাহলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাও উপকৃত হবে এবং রাষ্ট্রও শিক্ষকদের মর্যাদার গুরুত্ব অনুধাবন করবে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁঞা বলেন, 'এখন দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে সরকারের অতিরিক্ত এক টাকাও লাগবে না। সবার বেতন দশম গ্রেডের ওপরেই আছে এখন। সরকার আন্তরিক হলেই এটি বাস্তবায়ন করে দেওয়া সম্ভব। শিক্ষকের জীবনমানের উন্নতি না হলে, শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশের উন্নতি হবে না। সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবয়ন করে দিলে শিক্ষাক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন আসবে, শিক্ষার যাতে উন্নয়ন হয় সেদিকে তখন শিক্ষকরা আরো বেশি খেয়াল রাখবে।'

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদেরও আরো দায়িত্ববান হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, 'আমাদের কিছু দায়বদ্ধতাও আছে। আমরা শুধু অধাকার নিয়ে কথা বলবো, কিন্তু দেশ আমাদের কাছে কী চায়? করোনার মধ্যে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে গেছি। আজ আমাদের শিক্ষার্থীর যে ঘাটতি, এর কারণ করোনার মধ্যে আমরা যখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি, সেই সময়ে সবাই গণহারে মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে। ফলে প্রাথমিকে আগের চেয়ে শিক্ষার্থী কমে গেছে। এখন আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়। কেন ছেলেমেয়েরা অন্যদিকে ঝুঁকছে, তা আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।'

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক যোগ্যতা প্রশ্নে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা সুবল চন্দ্র পাল বলেন, 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি পাস শিক্ষার্থীদের যে প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করার কথা, অনেকই তা করেন না। তার প্রমাণ হলো, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য বিভিন্ন ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রাজুয়েটরা চান্স কম পায়। এই দায় শিক্ষকদের ওপর চাপানো হয়। কিন্তু এই দায় শুধু শিক্ষকদের না। এখানে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ৪৬: ১। সেখানে উচ্চ বিদ্যালয়ে এই অনুপাত অনেক কম।’

গোল টেবিল থেকে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেলের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ( নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলা) সভাপতি জাকির আহমদ খান কামাল বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে শিক্ষকতায় যোগ দেই। ৩১ বছর চাকরি করে প্রমোশন পাইনি। আমাদের সাথে যারা অন্য চাকরিতে ঢুকেছিলেন, তারা কিন্তু অনেক এগিয়ে গেছেন। আমাদের প্রমোশন নাই। তাহলে আলাদা বেতন স্কেল থাকা উচিত। অন্যদের বেতন কার কী হবে, সেটা তাহলে আর আমাদের মাথাব্যথা থাকবে না।

ঢাকা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উপদেষ্টা মো. সামছুদ্দিন খান বাবুল বলেন, শিক্ষকদের আধুনিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নাই। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য যোগ্য শিক্ষক, মানসম্মত বেতন ও শিক্ষকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।

#স্কুল #টাইম স্কেল #শিক্ষক