ইডেন কলেজ ছাত্রীদের রাতে বিক্ষোভ মিছিল | কলেজ নিউজ

ইডেন কলেজ ছাত্রীদের রাতে বিক্ষোভ মিছিল

হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রীদের জন্য নির্দেশনা দিয়ে নোটিশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়, হিটারসহ কোনো প্রকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী হোস্টেলে রাখা যোবে না। রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা বাধ্যতামূলকভাবে হলে হাজিরা দিতে হবে।

#ইডেন কলেজ

ছবি : দৈনিক শিক্ষাডটকমছবি : দৈনিক শিক্ষাডটকম

হলের ডাইনিংয়ে খাবার খাওয়া বাধ্যতামূলক করাসহ কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করছেন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা। হলের ছাত্রীরা এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ও ছাত্রীদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে এসব নীতিমালা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে কলেজের ক্যাম্পাসে এ মিছিল শুরু করেন তারা।

এর আগে বিকেলে হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রীদের জন্য নির্দেশনা দিয়ে নোটিশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়, হিটারসহ কোনো প্রকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী হোস্টেলে রাখা যোবে না। রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা বাধ্যতামূলকভাবে হলে হাজিরা দিতে হবে। এছাড়াও নির্দেশনায় বলা হয়, তিনবেলা হলের ডাইনিংয়ে বাধ্যতামূলকভাবে খাবার খেতে হবে।

তবে এই নির্দেশনা দেয়ার পরপরই ছাত্রীদের ক্ষুব্ধ হতে দেখা গেছে। পরে রাতে তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

যে কোনো বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইডেনে ছাত্রীরা বরাবরই সোচ্চার। এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং নারী-শিশু সহ সকল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইডেন কলেজে শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রীরা জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ হলে অবস্থানের জন্য বেশ কিছু অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত-নীতিমালা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

নির্দেশনার তিন নম্বরে বলা হচ্ছে- কোনো প্রকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী কক্ষে রাখা যাবে না। কক্ষে হিটার, রাইসকুকার, ইস্ত্রী, হেয়ার স্ট্রেইটনার, ইলেকট্রনিক কেটলি, রুম হিটার, এয়ার কুলার, ফ্রিজার ধরা পড়লে ওই ইলেকট্রনিক সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হবে। এবং নির্ধারিত হারে জরিমানা আদায় করা হবে। ফ্রিজার, এয়ারকুলার, রুম হিটার ১ হাজার জনপ্রতি রাইসকুকার, হিটার-ওভেন-ইনডাকশন চুলা ৫০০ টাকা জনপ্রতি কেটলি, হেয়ার স্ট্রেইটনার, ইস্ত্রী, ওয়াটার হিটার ৩০০ টাকা জনপ্রতি।

এই নীতিমালা অনুযায়ী ইলেকট্রনিক কোনো বস্তু থাকলেই তাকে জরিমানা করা হবে, তাহলে প্রশ্ন আসে মেয়েদের এগুলো রাখতে হয় কেনো? কারণ ক্যান্টিনে খাবারের মূল্য এতো বেশি এবং মান এতোই খারাপ যে সে খাবার খেয়ে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে টিকে থাকা যেমন মুশকিল সুস্থ থাকাও অসম্ভব। প্রশাসন ছাত্রী স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়ে আবার শিক্ষার্থীদের ওপর জরিমানা চাপিয়ে দিচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

এ ছাড়াও বলা হয়েছে, প্রতিদিন রাত ৯টায় কলেজ গেট বন্ধ হয়ে যাবে। নির্ধারিত সময়ে ছাত্রীরা হোস্টেলে ফিরবে। সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ছাত্রীরা হলে হাজিরা দেবে।

ছাত্রীরা বলেন, মফস্বলের কোনো কলেজে নয় আমরা ইডেন কলেজ যা ঢাকা মহানগরীর কেন্দ্রে অবস্থিত। শিক্ষার ব্যয় দিন দিন বাড়ছে, কিছুদিন আগেই আমাদের হলের বাৎসরিক ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকার মতো রাজধানীতে লড়াই করতে হলে টিউশন অথবা পার্ট টাইম জব করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে ৯টা বাজে হলগেট বন্ধ করার নীতিটি একেবারে অযৌক্তিক। ঢাকার জ্যাম সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। অভ্যুত্থানের পর মেয়েরা জোড়ালো দাবি তুলেছিলো হল গেট ১০টায় বন্ধ করতে হবে। আমরা এই দাবিতে অনড়।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেক ছাত্রীর ডাইনিংয়ে খাওয়া বাধ্যতামূলক। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার নিয়মানুযায়ী ডাইনিং-হল থেকে সংগ্রহ করে সেখানেই খেতে হবে, কক্ষে নেয়া যাবে না।

এর বিপরীতে ছাত্রীরা বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে ন্যূনতম কোনো আলাপ-আলোচনা তারা করেননি। খাবারের নিম্নমান এবং অধিক দামের ব্যাপারে আগেই বলেছি, এমন পরিস্থিতিতে ডাইনিংয়ে খেতে বাধ্য করা একটি চরম অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। একজন ক্যান্টিনে খাবে কি খাবে না সেটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত সেখানে এভাবে হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ অমূলক।

কলেজ কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, কলেজ প্রশাসন এবং হোস্টেল প্রশাসন থেকে দেয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত ছাত্রীরা মানতে বাধ্য থাকবে।

ছাত্রীরা এর বিপরীতে বলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে, তাদের অসুবিধা হয়, শিক্ষার্থীর স্বার্থবিরোধী এমন কোনো সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয়।

ছাত্রীরা আরো বলেন, প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট হলে ডেকে-ডেকে নীতিমালা শোনাচ্ছে এবং এগুলো মেনেই থাকতে হবে নতুবা থাকা যাবেনা। যেনো হলে আমরা অনুগ্রহপূর্বক থাকছি। কিন্তু এগুলো তো আমাদের অধিকার। শিক্ষার্থীদের জন্য নেয়া এতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই গ্রহণ করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক আচরণেরই প্রতিফলন। হলের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ও ছাত্রীদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করে এবং অবিলম্বে স্বার্থবিরোধী এই সব নীতিমালা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

#ইডেন কলেজ