যেখানেই যান সেখানেই অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান শিক্ষা কর্মকর্তা | স্কুল নিউজ

যেখানেই যান সেখানেই অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান শিক্ষা কর্মকর্তা

চাকরি জীবনে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোসলেম উদ্দিন যেখানেই বদলি হয়ে গেছেন সেখানেই নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।

#শিক্ষা কর্মকর্তা #স্কুল

চাকরি জীবনে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোসলেম উদ্দিন যেখানেই বদলি হয়ে গেছেন সেখানেই তার বিরুদ্ধে নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, তিনি রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, পোড়শাসহ বিভিন্ন স্থানে চাকরি করার সময় নারীদের সরকারি চাকরি, বিয়েসহ নানা প্রলোভনে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এ ঘটনায় এক নারীর স্বামী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যাও করেছেন। সংসার ভেঙেছে কয়েকজনের। প্রতারিত হচ্ছেন বুঝতে পেরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একাধিক নারী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সাময়িক বদলি করা হলেও তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

সম্প্রতি এই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত ও বিস্মিত ভুক্তভোগীরা।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ ও একাধিক ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারীর সঙ্গ পেতে উদাস হয়ে ফেসবুকে বন্ধুত্বের আহ্বান পাঠাতেন মোসলেম উদ্দিন।

কাউকে আসল আইডি থেকে আবার কাউকে বেনামি আইডি থেকে। সাড়া দিলে মেসেঞ্জারে বা কমেন্টে শুনাতেন ধর্মের বাণী। এভাবে ধীরে ধীরে টার্গেটকৃত নারীদের কাছে পৌঁছাতেন। মূল হাতিয়ার ছিল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ। টার্গেট ছিল সদ্য গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন নারী এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত গৃহবধূ। এ ছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের কথা বলে নিতেন সহানুভূতি। তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে করতেন শারীরিক সম্পর্ক। গোপনে ভিডিও ধারণ করে দিনের পরে দিন ব্ল্যাকমেইল করতেন। ডাকা মাত্র ওই নারীদের সঙ্গ দিতে বাধ্য করা হতো। পরে জানাজানি হওয়ায় একাধিক নারী হারিয়েছেন স্বামীর সংসার। স্ত্রীর ঘটনা জানতে পেরে নওগাঁর শাজাহান আলী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

মোসলেমের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, পোড়শাসহ বিভিন্ন ঠিকানায় অন্তত পাঁচ নারীর সন্ধান পাওয়া গেছে । প্রত্যেকেই মোসলেমের বিচার চেয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। পরে তাকে সাময়িক বদলি করা হলেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। এসব নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা তাদের হয়রানির পক্ষে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেন, যা কাছে সংরক্ষিত আছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইশিতা (ছদ্মনাম) জানান, নওগাঁ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পরিচয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। সদ্য স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন ইশিতা। শিক্ষা অফিসের কাছেই ইশিতার বাসা হওয়ায় মোসলেম উদ্দিন তাকে প্রায় সময় অফিসে ডাকতেন। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সখ্য তৈরি হয়। এরপর এক দিন অফিসের তৃতীয় তলার গেস্ট রুমে নিয়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন মোসলেম। বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাকমেইল করে সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন একাধিকবার।

পাবনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার থাকাকালীন ফেসবুকে মোসলেমের সঙ্গে পরিচয় হয় রাজশাহীর লক্ষ্মীপুরের নাফিসা (ছদ্মনাম) নামে এক গৃহবধূর। স্বামী বিদেশ থাকার সুযোগে অফিসে প্রায় সময় চায়ের অফার করতেন মোসলেম। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হলে নাফিসাকে বিয়ে ও সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেন। এভাবে এই নারীর সঙ্গে অফিসের গেস্ট রুমে, আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় অনেকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এ ছাড়া নওগাঁ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার থাকার সময়ে পোড়শা ডিগ্রি কলেজে তদন্তে গিয়ে কলেজের পাশে বসবাসকারী এক গৃহবধূর সঙ্গে পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গভীর সখ্য গড়ে উঠলে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন মোসলেম। বিষয়টি তার স্বামী জানতে পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

জানা যায়, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুন মোসলেম উদ্দিনের এসব অপকর্ম নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর কয়েকজন ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ জানান। ওই বছরের ১৬ আগস্ট পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামাল হোসেনকে নিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর। ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হলে ২০২২ সালের ২৫ জুলাই স্ট্যান্ড রিলিজ করে মোসলেমকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে বদলি করা হয়। একই বছরের ৩ নভেম্বর তাকে একই স্কেলে রেখে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর ফের ভুক্তভোগী নারীরা অভিযোগ জানান। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। উল্টো গত ১৪ জানুয়ারি প্রমোশন নিয়ে তাকে ঢাকা শিক্ষা ভবনের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন বলেন, এখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। পরিচালক স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। অভিযোগের বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী, প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে ফোন রেখে দেন। এরপর ফের কল করলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাধ্যমিক উইং শাখার) পরিচালক প্রফেসর খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আরও কয়েকজন আমাকে বলেছে। যতটুকু শুনেছি, ওটা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের পর আর কোনো কার্যক্রম নেই। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেব।

#শিক্ষা কর্মকর্তা #স্কুল