নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারে ঘটনায় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের দাবি, তৎকালীন সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশে কোনো নিয়ম-নীতির ধার ধারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
গুলি করার পর পুলিশের পক্ষ থেকে চাপ দিয়ে এমসিসিতে সই নেওয়া হতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছ থেকে। মাঠ প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাঁরা সই দিতে বাধ্য হতেন। তবে বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ করে কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই নরসিংদীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিদ ভুঁইয়া।
পুলিশকে গুলির নির্দেশ দেওয়ার দায়ে গত ১৫ এপ্রিল নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরী এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হন। প্রসিকিউশনের আবেদনের শুনানির পর সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনার পর গুলির নির্দেশদাতা সিনিয়র কর্মকর্তাদের নীরবতা দেখে নরসিংদী জেলা প্রশাসনে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত ৫ আগস্টের পর নরসিংদীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. বদিউল আলমকে চট্টগ্রামের উপভূমি সংস্কার কমিশনার পদে বদলি করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেপ্তারের ঘটনা বুধবার ছিল খুবই আলোচিত বিষয়।
গ্রেপ্তার হওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের ব্যাচমেট বিসিএস ৩৭ ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা প্রায় অভিন্ন ভাষায় নিজেদের আতঙ্কের কথা জানিয়ে বলেছেন, তাঁরা এভাবে ‘বলির পাঁঠা’ হবেন তা কল্পনাও করেননি। এ জন্য মাঠ প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারাও দায়ী। তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হোক।
জানা গেছে, তাহমিদ হত্যা, জেলা কারাগার ভাঙচুর ও লুটপাট, জেলা পরিষদ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটসহ একাধিক হামলার সময় সরকারি সফরে তখনকার নরসিংদীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. বদিউল আলম ছিলেন নয়াদিল্লিতে। ১৪ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত তিনি নয়াদিল্লি সফর শেষে ২১ জুলাই সকালে তিনি নরসিংদী পৌঁছেন। তাঁর পৌঁছার আগেই ২০ জুলাই রাতে নরসিংদী পৌঁছেন সেনা সদস্যরা। এ সময় ডিসির দায়িত্বে ছিলেন নরসিংদীর স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মৌসুমী সরকার রাখী। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি নরসিংদীতে যোগদান করেন।
জেলা প্রশাসনের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, কোটা আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়, নরসিংদী (জুডিশিয়াল মুনশিখানা) থেকে এক অফিস আদেশ জারি হয়। ওই আদেশে দেখা যায়, জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি চলাকালে মোতায়েনকৃত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আইনানুগ দিকনির্দেশনা প্রদান, ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য গত বছরের ১৭ জুলাই থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলামকে নরসিংদী সদর থানা এলাকায় দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়।