মডেল তিন্নি হ*ত্যা মামলায় গোলাম ফারুক অভি খালাস | বিবিধ নিউজ

মডেল তিন্নি হ*ত্যা মামলায় গোলাম ফারুক অভি খালাস

অভির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্তিয় আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন জানান, তিনি অভির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। মামলায় অভি খালাস পেয়েছেন। এ রায়ে তিনি খুশি।

#বিবিধ

মডেল ও অভিনয় শিল্পী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব ওরফে তিন্নি হত্যা মামলায় বহুল আলোচিত জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভিকে খালাস দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছা. শাহীনুর আক্তার এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার আগে চার্জশীটের ৪১ সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।

২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ নভেম্বর রাতে খুন হন মডেল তিন্নি। এরপর থেকেই পলাতক হন অভি। পলাতক থেকেই বিদেশ পাড়ি জমান তিনি। অভি কানাডায় অবস্থান করছেন মর্মে আদালতের নথীপত্রে উল্লেখ আছে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পিপি সৈয়দ আবু জাফর রিজভী বলেন, আদালতের এ রায়ে তিনি অসন্তুস্ট। রায়ের কপি হাতে পেয়ে তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা করা উচিত তিনি করবেন।

অভির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্তিয় আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন জানান, তিনি অভির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। মামলায় অভি খালাস পেয়েছেন। এ রায়ে তিনি খুশি।

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল তিন্নির পিতা সৈয়দ মাহবুব করিম আদালতে আংশিক জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু এরপরই ২৫ আগস্ট তারিখে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

মামলার নথীপত্রে দেখা যায়, তিন্নি স্বামী পিয়ালের মাধ্যমেই তিন্নির সাথে অভির পরিচয় হয়। এরপর তিন্নি ও অভির ঘনিষ্টতা বাড়ে। স্বামী পিয়াল বিষয়টি ভালভাবে নিতে পারেনি। বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে অভির পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ নভেম্বর পিয়ালকে ডিভোর্স দেন তিন্নি।

অভির ইচ্ছা ছিলো ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিন্নিকে ভোগ করে যাওয়া। বিয়ে করে তিন্নিকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার ইচ্ছা অভির কোনদিনই ছিলোনা। বিষয়টি বুঝতে পেরেই তিন্নি তাকে বিয়ে করার জন্য অভিকে চাপ দেয়। অভি বিয়ে করতে অস্বীকার করলে অভির সব গোপন খবর মিডিয়ায় ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেন তিন্নি। এরপর ১০ নভেম্বর রাত্রে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলালের পাশে তিন্নির লাশ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানার এএসআই সফি উদ্দিন থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করলেও পরে মামলা স্থানান্তর হয় সিআইডিতে।

এর ৬ বছর পর ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ নভেম্বর একমাত্র গোলাম ফারুক অভিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। মামলায় বিভিন্ন সময় তিন্নির স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়ালসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তাদেরকে মামলায় দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

পুলিশি তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভি অভিযুক্ত হলেও তাকে আর ধরতে পারেনি পুলিশ।

অভির অবর্তমানেই ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুলাই ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ‘তিন্নি হত্যা ও লাশ গুম সংক্রান্ত মামলায় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ নভেম্বর অজ্ঞাত হিসাবে তিন্নির লাশ উদ্ধারের পর অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার এএসআই মো. সফি উদ্দিন।

এই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় ওই থানার এসআই মো. কাইয়ুমকে। তিন্নির লাশের ছবি পত্রিকায় ছাপা হলে নিহতের এক আত্মীয় সুজন তিন্নির লাশটি সনাক্ত করেন।

চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে একই বছর ২৪ নভেম্বর তদন্তভার ন্যাস্ত হয় সিআইডিতে। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডির পরিদর্শক ফজলুর রহমানকে।

এরপর ৬ বছরে একে একে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক সুজাউল হক, এএসপি গোলাম মোস্তফা, এএসপি আরমান আলী, এএসপি কমল কৃষ্ণ ভরদ্বাজ এবং এএসপি মোজাম্মেল হক। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে সাক্ষী করা হয়, জব্দ করা হয় ২২টি আলামত। লেখাপড়ায় অসম্ভব মেধাবী ছিলেন গোলাম ফারুক অভি। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বোর্ড পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। মেধাবী অভি অনেকটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দিনে দিনে ধাবিত হন পতনের পথে। মূলত এরশাদের শাসনামলেই অভির উত্থান ঘটে।

নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন তিনি। পেশীশক্তির মাধ্যমে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে করে তুলেছিলেন তার সন্ত্রাসের তল্লাট। একসময়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের হাত ধরে বরিশাল এক আসন থেকে নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য।

#বিবিধ