শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান ঠেকেছে তলানিতে। হতাশা ও অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন শত শত শিক্ষার্থী।
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটিতে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। অভিভাবক-শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং বিভাগের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এসব বিভাগে নতুন কোনো শিক্ষকের নিয়োগ না হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম প্রায় ভেঙে পড়েছে।
এ দিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় এক বিভাগের শিক্ষক অন্য বিভাগের ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে নিয়মিত পাঠদান, ল্যাব কার্যক্রম কিংবা সুষ্ঠু পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা বজায় রাখা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেবল ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদেই নয়, দর্শন, ভূগোল ও পরিবেশ, আইসিটি এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতেও রয়েছে চরম শিক্ষক সংকট। প্রতিটি বিভাগে গড়ে ৪৫০ থেকে ৫৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, কিন্তু সে তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং সেন্টারের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
এ বিষয়ে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আহামেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকের অভাবে ক্লাসে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। বই পড়লে শুধু থিওরি জানা যায়। কিন্তু ফিন্যান্সের মতো বিষয়ে শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠদান, এসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট ইত্যাদি অত্যন্ত জরুরি। এসবে ঘাটতি থাকলে রেজাল্টও ভালো হয় না, চাকরির বাজারেও তেমন সুবিধা করা যায় না। তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, কখন এসব সমস্যার সমাধান হবে, তা কর্তৃপক্ষও জানে না।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল মাহমুদ বলেন, যেখানে শিক্ষকই নেই, সেখানে শিক্ষা কোথা থেকে আসবে আমরা যেন দিকহীন এক জাহাজের যাত্রী। প্রতিটি দিন আমাদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এই শিক্ষক সংকট। আমরা চাই অতি দ্রুত যেন এ সমস্যার সমাধান হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শুধু আশ্বাসে পেট চলে না আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধৈর্যও ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই অতি দ্রুত একটা সমাধানে আসা উচিত কলেজ কর্তৃপক্ষের।
শুধু শিক্ষার্থী নন, এ সংকটের প্রভাব পড়েছে শিক্ষকদের ওপরও। ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বলেন, যেহেতু নির্দিষ্ট বিভাগে শিক্ষক নেই, তাই ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদেরই অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত মানসিক ও শারীরিক চাপ পড়ছে, যা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলছে। তাই আমরাও চেষ্টা করছি যেন দ্রুত এ সমস্যার একটা সমাধান হয়।
এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ সংকট সমাধানে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি এ কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেন। তারও প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেছে, কোনো আশার আলো দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল হাসান বলেন, আমরা শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে। আমরাও চাই শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে তাদের কর্মজীবনে প্রবেশ করুক।