শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর করে যেতে চান শিক্ষা উপদেষ্টা | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর করে যেতে চান শিক্ষা উপদেষ্টা

আমি নিজেই এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভেতরেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখবে। বাংলাদেশে থেকেই বিশ্বকে তারা নেতৃত্ব দেবে।’

#উচ্চশিক্ষা #শিক্ষা উপদেষ্টা

উচ্চশিক্ষার পথে বাধাগুলো দূর করতে বর্তমান সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার।তিনি বলেন, এ সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যদিও আমরা স্বল্পমেয়াদি, তারপরও অন্তত উচ্চশিক্ষার পথে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়েছে, সেগুলোকে দূর করতে আমরা শুধু নীতিগত নয়, বরং তা বাস্তবায়ন করে যাব।

শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবে সেন্ট্রাল উইমেনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা মনে করি, স্বল্পকালীন মেয়াদে কিছু পরিবর্তন করে যাওয়া সম্ভব। আমরা এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর করে যেতে চাই, যা আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও বিজ্ঞানপ্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন করবে, যা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূল্যবোধসম্পন্ন হবে।

তিনি বলেন, আমি নিজেই এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভেতরেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখবে। বাংলাদেশে থেকেই বিশ্বকে তারা নেতৃত্ব দেবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা অধিকার বিবর্জিত প্রজা থেকে অধিকারসমৃদ্ধ নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছি। এটা সম্ভব হয়েছে হাজারের বেশি তরুণ–তরুণীর আত্মত্যাগের ফলে। আমি তাই একাত্তরসহ পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করছি।

সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বিশ্বের পরিবেশ বিপর্যয়ের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সামান্য অংশই এখন বনাঞ্চলের আওতায় আছে। সুন্দরবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যানগ্রোভ বনও হুমকির মুখে।

প্লাস্টিক দূষণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণে বাংলাদেশ বিধ্বস্ত। আমাদের নদী ও জলপথ প্লাস্টিক দূষণের কারণে শ্বাস নিতে পারছে না। এখান থেকে বেশি দূর নয়, ইসলামবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অনানুষ্ঠানিক প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার শিল্প আছে। তোমরা নিজেরাই গিয়ে দেখতে পারো কীভাবে নারীরা কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়া নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।’

তিনি আরো বলেন, আমরা যেটাকে উন্নয়ন বলি, সেটা আত্মহত্যার শামিল। উন্নয়ন এমন হতে হবে, যা প্রকৃতির ওপর ন্যূনতম চাপ সৃষ্টি করে। আমরা যদি এখনই উদ্যোগ না নিই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।’

এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টা পাটের ব্যাগ ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় হর্ন না দেওয়া, কার্বন নিঃসরণ কমানো, নদীদূষণ রোধ এবং বন রক্ষার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারীশিক্ষার প্রসারে বেগম রোকেয়ার অবদান, একাত্তর ও চব্বিশের আন্দোলনে নারীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।

তিনি বলেন, যৌন হয়রানী ও সহিংসতা নিয়ে আমরা চিন্তিত। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানী মোকাবিলা করা যায়নি। আমাদের একটা কমিটি আছে, কিন্তু সেটা কার্যকর নয়। এখানে পরিবর্তন আনতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী সহিংসতা বেড়েছে, তা নয়। কিন্তু সমাজ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পুরোনো ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। এটি গড়তে যে সময় লাগছে, সেখানে আমরা এখনো পৌঁছাতে পারিনি। ভাঙাগড়ার ভেতর থাকায় মেয়েরা–শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় আছে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত রোধ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।’

স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পারভিন হাসান বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা, পোশাক নিয়ে কটূক্তির ঘটনা ঘটছে। এসব থেকে উত্তরণ খুব সহজ নয়। প্রয়োজন সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। নারীবিষয়ক সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। তবে আমরা আশাবাদী এবং ইতিবাচক সংস্কারের পক্ষে।’

সমাবর্তনে আরো বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টির সভাপতি কাজী জাহিদুল হাসান, শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরীন নীলা।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি বিভাগের মোট ৬৮৪ জনের মধ্যে ৪৬২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। তারাও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাদের মধ্যে ২৯ শিক্ষার্থী ভাইস-চ্যান্সেলরস অ্যাওয়ার্ড পান।

#উচ্চশিক্ষা #শিক্ষা উপদেষ্টা