চারাগাছগুলোর বড় হওয়া আমায় শিখিয়েছে, কোনো প্রাণই ছোট থাকে না- ববি শিক্ষার্থীর স্মৃতিকারতা | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

চারাগাছগুলোর বড় হওয়া আমায় শিখিয়েছে, কোনো প্রাণই ছোট থাকে না- ববি শিক্ষার্থীর স্মৃতিকারতা

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশিরভেজা ঘাস, নানা নামের চত্বর, মুক্তমঞ্চে শেষ বিকেলের রোদ্দুর আমাকে কখনো বানিয়েছে মানুষের মুখের মুখরোচক সংলাপ। কখনো আবার আমাকে দিয়েই লিখিয়েছে হৃদয় নিংড়ে দেয়া আমার গল্প, গন্তব্য!

#বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) চারাগাছগুলোর বড় হওয়া আমায় শিখিয়েছে, কোনো প্রাণই ছোট থাকে না- বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী স্মৃতিকারতা প্রকাশ করেছেন এভাবেই।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ১৪তম প্রতিঠাবার্ষিকী ছিল শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি)। দিনটি উপলক্ষে নিজের ফেসবুকে এক পোস্টে এভাবেই নিজের উপলব্ধি তুলে ধরেছেন সাবেক শিক্ষার্থী শফিক মুন্সি।

শফিক মুন্সি ফেসবুকে লেখেন- আমাকে গড়েছে আমার বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম যেদিন ক্যাম্পাসে যাই, সেদিন আমার চোখে ধরা দেয় অর্ধনির্মিত কিছু দালান ঘেরা ধূঁ ধূঁ মরুভূমি। সেখান থেকে নানা রঙের ক্যাম্পাস হয়ে ওঠা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পরিবর্তন আমাকে শিখিয়েছে খারাপের পর ভালো দিন আসবেই!

গোধুলির কীর্তনখোলার বয়ে চলা জানান দিয়েছে, জীবনে কিছুই থেমে থাকে না। সেই ভোলা রোড, আহা আমার প্রিয় ভোলা রোড!

বর্ষার প্রথম কদম ফুলের উপহার, দিগন্ত সামনে রেখে দ্বিপ্রহর চার পায়ের পদচারণা, শীত গ্রীষ্ম বর্ষার নানা রূপের মুগ্ধতা কী না দিয়েছো তুমি! জীবনে কিছু সুন্দর মুহূর্ত আসবেই, সেই বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে ভোলা রোড।

ক্লাসরুমে পৌঁছাতে গিয়ে যেসব সিঁড়ি ভেঙেছি, বারবার থেমে গেছি। আমার সামনে এসেছে কবিতা, বিপ্লব, সংগ্রাম, ক্লেশ, অশ্রু বা আনন্দ! বিশ্ববিদ্যালয়ের চারাগাছগুলোর বড় হওয়া আমায় শিখিয়েছে, কোনো প্রাণই ছোট থাকে না। প্রাণ থাকলে দেহ মাথা তুলে দাঁড়াবেই, স্পর্ধায় ছুঁতে চাইবে আকাশ!

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে ছাড়া যাদের দিনাতিপাত সম্ভব ছিল না, একসময় তাদের ছোড়া প্রতিহিংসার গুলিতে বিদ্ধ হয়েছি। তারাই শিখিয়েছে, কোনো সম্পর্কই স্থায়ী নয়। যারা কখনো আমার সুখ্যাতি করেনি, তাদের অনেকে বাঁচিয়েছে, ঘোরতর অন্ধকার থেকে। তারাই প্রমাণ করেছে মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ!

ধুলোমাখা যে প্রান্তরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার প্রথম মিছিল - প্রথম স্লোগান, সেই প্রান্তরই শিখিয়েছে, মানুষের ভালো - মন্দের খবর কীভাবে ছাপতে হয়! যেই প্রেম কাছে এসেও এলো না, সেই প্রেম শিখিয়েছে মানুষকে ভালোবাসতে হয়!

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশিরভেজা ঘাস, নানা নামের চত্বর, মুক্তমঞ্চে শেষ বিকেলের রোদ্দুর আমাকে কখনো বানিয়েছে মানুষের মুখের মুখরোচক সংলাপ। কখনো আবার আমাকে দিয়েই লিখিয়েছে হৃদয় নিংড়ে দেয়া আমার গল্প, গন্তব্য!

এই ক্যাম্পাস কখনো কখনো আমার আলোচনা করেছে অজস্র কারণে, আবার কখনো সমালোচনায় মত্ত হয়েছে বিনাকারণে। কখনো আমাকে ধারণ করেছে, আমার যোগ্যতার চেয়েও বেশি। কখনোবা ছুড়ে ফেলেছে দোষী সাব্যস্ত হবার ঢেড় আগেই!

এভাবেই আমাকে শিখিয়েছে, সবকিছু সবসময় আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। তবু উত্থান-পতনের জীবনে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে অসংখ্য নির্ঘুম রাত শেষে সুন্দর সকালের আশায়। এই আশা নিয়েই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে রাতের পর রাত কেউ পার করছে বইয়ের পাতায় চোখ রেখে, কেউবা লাইব্রেরিতে নতুন কবিতা ভেবে, কেউ হয়ত ল্যাবে বসে দুনিয়া বদলে দেবার পরিকল্পনা নিয়ে। কারণ তাদেরকেও জয়ী হতে গড়ে দিচ্ছে, আমার প্রাণের বিদ্যাপীঠ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে হারতে শেখায়নি, বিজয়ী হতে লেগে থাকা শিখিয়েছে।

শুভ জন্মদিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ভালো থেকো!

#বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়