সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন পরীক্ষার সনদ দিয়ে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদ হিসাবরক্ষক হলেও শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তার কাছে অসহায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক হিসেবে আবুল কালাম ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে যোগদান করেন। তার দুর্নীতি, অনিয়মের প্রমাণসহ ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকেরা মাউশি বরাবর অভিযোগ করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও দুবার মাউশি বরাবর অভিযোগ করেছেন। তবে কোনো কাজ হয়নি।
দেড় যুগ ধরে একই কর্মস্থলে থেকে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন আবুল কালাম বলে অভিযোগ।
শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদিউজ্জামান আহমদ নিয়মিত অফিস করেন না। এ সুযোগে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন আবুল কালাম। এ ছাড়া বিভিন্ন বাজেটে স্বাক্ষর করে সেই টাকা হাতিয়ে নেন। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মার্চ উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে তাঁর মাউশির একটি কাগজে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষরের জায়গায় তাঁর স্বাক্ষর জাল করেন আবুল কালাম।
ওই শিক্ষক বলেন, ‘শুধু এটা নয়, এ রকম সবকিছুতেই শিক্ষা কর্মকর্তার পরিবর্তে স্বাক্ষর করেন আবুল কালাম আজাদ।’ আবুল কালামের এই জালিয়াতির কারণে নিজের স্বাক্ষর দুই-দুইবার পরিবর্তন করতে বাধ্য হন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান। স্বাক্ষর নিজে পরিবর্তন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি নিজের দুর্বলতা থাকার কারণে।
উপজেলার বর্ণি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমানের নিবন্ধনসহ বিএড ডিগ্রি না থাকার বিভিন্ন অভিযোগ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়। এটা জানতে পারেন আবুল কালাম। আর তখন সাজ্জাদুর রহমানকে নিবন্ধন, বিএড ডিগ্রির সার্টিফিকেট মিলিয়ে দেওয়াসহ সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন আবুল কালাম। তবে শর্ত দেন, তার শ্যালিকা ইয়াছমিন আক্তারকে ওই স্কুলের কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দিতে হবে। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সাজ্জাদুর রহমানের জাল সার্টিফিকেটের কারণে তিনবার রিজেক্ট করলেও আবুল কালামের অবৈধ সুবিধা নিয়ে তিনি এখনো বহাল রয়েছেন কর্মস্থলে।
এম সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজে নিজের স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন আবুল কালাম। সেখানেও ব্যবহার করেছিলেন জাল সনদ। পরে ওই কলেজের অধ্যক্ষ মাউশিতে অভিযোগ করলে কমিটি কর্তৃক তার বেতনাদি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভুয়া সনদ দিয়ে তাঁর আরেক শ্যালিকা নাছরিন সুলতানাকে রনিখাই হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ে একই পদে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তিনি।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই মাউশির পরিচালক বরাবর ৯টি স্কুল-মাদরাসার প্রধান শিক্ষক একটি অভিযোগ করেন। সেখানে তাঁরা ১০টি পয়েন্টে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারে উচ্চপদস্থ ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ভালো থাকায় সেটার আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেখানে তাঁরা উল্লেখ করেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ করেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল কালাম বলেন, ‘উপজেলার কয়েকজন শিক্ষক আমার ওপর হিংসাত্মক হয়ে এই অভিযোগ করেছেন। তাঁদের জন্য আমার স্ত্রীর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান আহমদ বলেন, ‘আর আবুল কালামের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ শুনেছি। তবে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। এরপরও আমি আমার আগেরটা পরিবর্তন করেছি।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শওকত হোসেন মোল্যা বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’