গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মা-বাবা ও অভিভাবকদের পা ধুয়ে দিয়ে দিয়েছেন তিন শতাধিক শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার এসকেএমএইচ উচ্চ বিদ্যালয় এ ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মা-বাবাসহ গুরুজনদের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা বৃদ্ধির পাশাপাশি আলোকিত জীবন গড়ে উঠবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সে কারণে এ আয়োজনে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আনন্দ অনুভব করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে এসকেএমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল মাঠে চেয়ারে বসে আছেন মা-বাবা আর গুরুজন। তার পাশেই ফুল, জল, ধূপকাঠি ও মোমবাতি নিয়ে বসে আছেন সন্তানেরা। নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা সবাই এক সঙ্গে মা-বাবা আর গুরুজনদের পা ধুয়ে এবং মুছে দিয়ে মোমবাতি ও ধূপকাঠি জ্বালিয়ে, ফুল ছিটিয়ে আশীর্বাদ নেন। এমন ভক্তি দেখে মা-বাবা ও গুরুজনদের চোখ বেয়ে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ে। মা-বাবাকে জড়িয়ে আবেআপ্লুত হন সন্তানেরাও!
‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিক নুর আলম।
এসকেএমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার বাড়ৈর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিদ্যানুরাগী খগেন্দ্রনাথ গাইন, ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ বৈদ্য, ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি যতীন্দ্রনাথ বল্লভ, প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক পঙ্কজ কুমার বৈদ্য, ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি সুনীল চন্দ্র বিশ্বাস বক্তব্য দেন।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী কোয়েল বাইন বলেন, ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় আমাদের গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, জীবনে বড় হতে গেলে গুরুজনদের দোয়া ও আশীর্বাদ প্রয়োজন। তাদের দোয়া ও আশীর্বাদ ছাড়া কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়’!
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী গৌরী বল্লভ বলেন, ‘এবারই প্রথম এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা-বাবা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারলাম। এখন অনুভব করতে পারছি, মা-বাবা ও শিক্ষকদের কতটা ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি আমরা’!
অভিভাবক দিলীপ কুমার বাইন বলেন, ‘এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে গুরুজনদের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা, গড়ে উঠবে। সেই সঙ্গে এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনন ও মেধারও উন্নতি হবে’।
অপর এক অভিভাবক মল্লিকা গাইন বলেন, ‘এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা মাদক, জঙ্গি তৎপরতা ও ইভটিজিং থেকে দূরে থাকবে’!
এসকেএমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার বাড়ৈ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা শেখাতে আমরা এমন আয়োজনের কথা চিন্তা করি। তারই ধারাবাহিকতায় ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা গড়ে তুলতে আগামীতেও এমন আয়োজন করা হবে’।
কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিক নুর আলম বলেন, ‘গুরুজনে কর নতি’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থী মানবিক গুণাবলি নিয়ে সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। এতে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখবেন না সন্তানেরা। শিক্ষার্থীদের মানবিক হিসেবে গড়ে তুলতে উপজেলার প্রতিটি স্কুলে এমন আয়োজন করা হবে।