মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা আর চায়না-থ্রি আসছে | বিবিধ নিউজ

মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা আর চায়না-থ্রি আসছে

দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলোতে এখন হালকা সবুজ রঙের ছোট ছোট গুটি পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে। গুটিগুলোর ওপর ঝলমলে রোদ পড়ায় তাদের লুকিয়ে থাকার চেষ্টা তেমন সফল হচ্ছে না। তবে এই দৃশ্য লিচুপ্রেমীদের মনে আনন্দের ঢেউ তুলেছে, কারণ আর মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করবে রসালো, লালচে-গোলাপি রঙের দিনাজপুর অঞ্চলের বিখ্যাত লিচু। এরপর ট্রাক বোঝাই করে এই ফল ছড়িয়ে পড়বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

#ফল #বাংলাদেশ

দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলোতে এখন হালকা সবুজ রঙের ছোট ছোট গুটি পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে। গুটিগুলোর ওপর ঝলমলে রোদ পড়ায় তাদের লুকিয়ে থাকার চেষ্টা তেমন সফল হচ্ছে না। তবে এই দৃশ্য লিচুপ্রেমীদের মনে আনন্দের ঢেউ তুলেছে, কারণ আর মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করবে রসালো, লালচে-গোলাপি রঙের দিনাজপুর অঞ্চলের বিখ্যাত লিচু। এরপর ট্রাক বোঝাই করে এই ফল ছড়িয়ে পড়বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর জেলায় বর্তমানে ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৯৮টি লিচু বাগান রয়েছে। এ বছর জেলায় ৩৪ হাজার ৬২৮ টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

লিচুর রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দিনাজপুর জেলা তার লিচুকে ব্র্যান্ডিংও করেছে। এই অঞ্চলে মাদ্রাজি, বেদানা, হাড়িয়া বেদানা, বোম্বাই, চায়না-থ্রি, চায়না–টু, কাঁঠালি ও মোজাফফরি সহ বিভিন্ন উন্নত জাতের লিচুর চাষ হয়। জেলার প্রায় সব জায়গাতেই লিচুর বাগান দেখা গেলেও, সদর উপজেলার মাসিমপুর, ঘুঘুডাঙ্গা ও উলিপুর, বিরলের মাধববাটি, করলা, রবিপুর, রাজারামপুর, মহেশপুর, বটহাট ও রানীগঞ্জ, খানসামার গোলাপগঞ্জ ও কাচিনীয়া, বীরগঞ্জের সনকা এবং চিরিরবন্দরের কারেন্ট হাট এলাকা লিচু চাষের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বেলে-দোঁআশ মাটি লিচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় এসব এলাকায় কৃষকদের মধ্যে লিচু চাষের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে।

সরেজমিনে দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর ও উলিপুর এবং বিরল উপজেলার মাধববাটি ও রবিপুর সহ বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা এখন শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লম্বা পাইপের সাহায্যে গাছের আগা পর্যন্ত কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। গত ১২ দিনে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বছর লিচুর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সেচের তেমন প্রয়োজন হয়নি। চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূল থাকায় তারা অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত।

সদর উপজেলার কসবা এলাকার লিচুচাষি শাহজাহান আলী জানান, তার ৫০টি বেদানা লিচুর বাগান রয়েছে। গত বছর তিনি বাগান চুক্তি দিয়েছিলেন, তবে এবার নিজেই পরিচর্যা করছেন। গত মৌসুমে ফলন কম হলেও, এবার প্রায় প্রতিটি গাছেই ভালো ফল ধরেছে। গুটির আকারও বেশ বড় হয়েছে। তিনি আশা করছেন, প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে সাড়ে তিন হাজার লিচু পাওয়া যাবে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ভালো লাভ হবে।

বিরল উপজেলার পুরিয়া এলাকার লিচুচাষি আফজাল হোসেন জানান, গত বছর মাদ্রাজি লিচু প্রতি হাজারে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এবার বাজার আরও ভালো থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

লিচু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মামুন জানান, দিনাজপুরে সাধারণত মে মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে লিচুর ভরা মৌসুম শুরু হয়। বাজারে প্রথম আসে মাদ্রাজি, এরপর পর্যায়ক্রমে বোম্বাই, বেদানা ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু পাওয়া যায়। সবশেষে আসে হাড়িয়া বেদানা, কাঁঠালি ও মোজাফফরি। তিনি লিচুর বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতির ওপর জোর দেন এবং শহরের কালিতলার বর্তমান বাজারটির যানজট ও অন্যান্য সমস্যা তুলে ধরে এটিকে গোর-এ-শহীদ মাঠে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

বিরল উপজেলা, যেখানে সবচেয়ে বেশি লিচুর বাগান রয়েছে, সেখানকার কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, এ বছর লিচুর ফলন খুবই ভালো। তুলনামূলকভাবে তাপমাত্রা কম থাকায় রোদে পোড়া, পোকার আক্রমণ ও ফল ঝরে পড়ার হার কম। বর্তমানে লিচুর গুটির আকার দেড় থেকে দুই সেন্টিমিটার হয়েছে এবং এখন শাঁস বৃদ্ধির সময় চলছে। এই সময়ে মাটিতে পর্যাপ্ত রসের প্রয়োজন হয়। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার লিচুর আকার বড় ও মিষ্টি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কিছু গাছে ফলন কম হলেও, এটি লিচুর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। তবে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, কৃষকদের মধ্যে লিচুর যত্ন ও পরিচর্যা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে গত দুই বছরে এই উপজেলা থেকে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডে লিচু রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে।

সব মিলিয়ে দিনাজপুরের লিচু চাষিরা এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন এবং লিচুর ঝলমলে গুটিগুলো যেন সেই সুখবরেরই পূর্বাভাস দিচ্ছে। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ, তারপরই রসালো লিচুর মিষ্টি স্বাদে মাতোয়ারা হবে দেশ।

#ফল #বাংলাদেশ