ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে, যা একটি সম্ভাব্য সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাম্প্রতিককালে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে ভারত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা, আকাশসীমা নিয়ন্ত্রিত করা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করা। পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও প্রায় সমান পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পাকিস্তান আরো একধাপ এগিয়ে পরমানু যুদ্ধের কথাও ভাবছে।
যদি সত্যিই যুদ্ধ হয়, তবে এর ভয়াবহতা ব্যাপক হতে পারে। দুটি দেশই পরমাণু শক্তিধর, তাই একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ দ্রুত পারমাণবিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। যার ফলস্বরূপ উভয় দেশেই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি ঘটবে। এছাড়াও, প্রচলিত অস্ত্রের ব্যবহারেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত উপমহাদেশের পরমানু শক্তিধর দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হলে এরপর ভয়াবহতা ভোগ করতে হবে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান,নেপাল, ভূটান, শ্রীলংকা,মালদ্বীপ ও মিয়ানমার এমনকি চীনকেও। কারণ এই দেশগুলো অনেকের যেমন বিভিন্ন নিত্যপন্যের যোগ হয় ভারত থেকে তেমনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশী জনসংখ্যার দেশ হিসাবে চীনের বড় বাজার ভারত।
এছাড়াও যে বিষয়টি সম্ভাব্য যুদ্ধকে ঠেকাতে পারে অথবা চুড়ান্ত ভাবে পরিস্থিতিকে যুদ্ধের দিকে নিতে পারে তা হলো দুই দেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। এখনই বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এই সংঘাতের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ভারতের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে, অন্যান্য প্রধান শক্তিধর রাষ্ট্র, যেমন চীন, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, উভয় পক্ষকে সংযম বজায় রাখার এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। চীনের পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও, তারা সম্ভবত এই অঞ্চলে বড় ধরনের সংঘাত চায় না। রাশিয়ারও ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তাই তারা একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিতে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিবও দুই দেশকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও বিশ্বের যে কোন প্রান্তে সংঘাতে এরচেয়ে বেশী কিছু বলার থাকে না জাতিসংঘ নামের এই সংস্থাটির।
সামরিক শক্তির বিচারে ভারতের পাল্লা কিছুটা ভারী। তবে পাকিস্তানেরও একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে এবং তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।তবে সামরিক শক্তির সঠিক চিত্র জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কখনোই কোন দেশ পুরোপুরি প্রকাশ করে না। ভারত পাকিস্তানের যে সামরিক সরঞ্জামের চিত্র এখানে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া গেলো তা সঠিক চিত্র নাও হতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ সত্যিই একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। পারমানবিক শক্তিধার দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বলে আর কিছু থাকবে না। যা এই অঞ্চলের উদিয়মান অর্থনীতির জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে মানবিক পরিস্থিতিতেও বিপর্যয় ডেকে আনবে। পারমাণবিক অস্ত্রের উপস্থিতি এই সংঘাতকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে। তাই যেকোনো প্রকার সামরিক পদক্ষেপের আগে এর ভয়াবহ পরিণতি বিবেচনা করা অপরিহার্য।