চাকরিহারা শিক্ষক কর্মচারিদের পাশে থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রিভিউ পিটিশন ও আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিলেন।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শনিবার নবান্নে চাকরিহারা গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মীদের অভয় দিয়ে বলেছেন,সবার যাতে চাকরি থাকে সেই বিষয়টা দেখবেন তিনি। আইনে মধ্যে থেকেই এই বিরাট সংখ্যাক শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য একটা উপায়ও বের করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের মাধ্যমে ফোনে চাকরিচ্যুত শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানান, রাজ্য সরকার তাদের জন্য সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে।
শুধু তাই নয়, আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানেরও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘোষণা অনুযায়ী, গ্রুপ সি কর্মীরা প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীরা ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যদি আদালত শেষ পর্যন্ত শিক্ষাকর্মীদের কাজে যোগদানের অনুমতি না দেয়, তবে রাজ্য সরকার আইন মেনে অন্য বিকল্প উপায় খুঁজে বের করবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু বিবেচনা করবে।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের এক সাম্প্রতিক রায়ে ২০১৬ সালের এসএসসি-র সম্পূর্ণ নিয়োগ প্যানেল বাতিল করা হয়েছে।
এর ফলে রাজ্যের সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির প্রায় ২৫ হাজার ৭৩৫ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যেখানে সাদা ওএমআর শিট জমা দিয়েও অনেকে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
প্রায় ২৬ হাজার কর্মীর চাকরি হারানোর ফলে রাজ্যের স্কুলগুলিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক স্কুলেই একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে নেতাজি ইন্ডোরের এক সভায় চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তবে, এত বিপুল সংখ্যক কর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় স্কুলগুলির স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষকদের নতুন প্যানেল তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও, শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নির্দেশ দেয়নি।
এতে শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ আরও বেড়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে নবান্নের সভাকক্ষে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে চাকরিহারা গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মীরা বৈঠকে বসেন।
এই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি ফোনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং রিভিউ পিটিশন দাখিল করা ও মাসিক ভাতা প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাস এবং আর্থিক সহায়তার ঘোষণা চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় স্বস্তির খবর।
এখন দেখার বিষয়, আইনি লড়াই কোন দিকে মোড় নেয় এবং সরকার তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ভবিষ্যতে আর কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।