বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইইউর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে উপাচার্যসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন। আন্দোলনকারীর কিছু শিক্ষার্থীকে ফাঁদে ফেলতে উপচার্য তার পদত্যাগপত্রে কৌশলে আশ্রয় নেন। বিষয়টি ধরে ফেলে শিক্ষার্থীরা। অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় নিমজ্জিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থা তৈরি করতেই উপচার্য তার দলবল নিয়ে পদত্যাকের ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানের কারণে ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের সাথে নিয়ে পদত্যাকে বাধ্য হয়ে ’কিছু শিক্ষার্থীর’ দাবির মুখে পদত্যাগ করছেন বলে উল্লেখ করেন। বিপত্তি বাঁধে সেখানেও। শিক্ষার্থীরা ওই রাতে উপাচার্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়াসহ ১১ শীর্ষ কর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ক্যাম্পাসে। পরে তার পদত্যাগ করলে অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।
কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে তা অনুসন্ধানে ট্রাস্টি বোর্ড তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সোমবার। বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ড তাদের গঠন করা কমিটিকে আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
যেখানে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের নিজস্ব লোক দিয়েই তদন্ত করছেন বলে অভিযোগ তুলেন। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্ধ হয়। তাদের কথা ছাত্র প্রতিনিধি বা নিরপেক্ষ কাউকে ছাড়া প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে না।
আরো পড়ুন: অনিয়মই যেখানে নিয়মঅনির্দিষ্টকাল বন্ধ ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ভিসিসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার সঠিক চিত্রও সামনে আসবে না। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের। ট্রাস্টি বোর্ডের গঠন করা কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এক বার্তায় তারা জানান,
’ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটিকে সত্যিকারের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখার জন্য কমিটিতে এমন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট নন।
এদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC), সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর, বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধিরা থাকতে পারেন। এছাড়াও, একটি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে, যেমন PUSAB-PUNAB-এর প্রতিনিধি কমিটিতে থাকা আবশ্যক।
আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে জোরালোভাবে দাবি করছি, যাতে কমিটির গঠন প্রক্রিয়ায় এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়।
অন্যথায়, বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে যে কমিটি একটি পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করবে, যা কেবল UIU-এর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং ইউনাইটেড গ্রুপের স্বার্থ রক্ষা করবে, প্রকৃত সমস্যার সমাধান করবে না। পূর্বের কমিটির মতো আবারও শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করা হতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটার আশঙ্কা থাকবে।’
ট্রাস্টি বোর্ড তাদের বিবৃতিতে বলেন, ‘ইউআইইউ এর স্বচ্ছতা এবং বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নে অবদান রাখার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বোর্ড নিম্নলিখিত সদস্যদের নিয়ে একটি স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে:
● প্রফেসর। মোঃ মুজিবুর রহমান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, চেয়ার
● ড. সাদিদ মুনির, সহযোগী অধ্যাপক, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, সদস্য
● ড. মোহাম্মদ তারিক হাসান, সহযোগী অধ্যাপক, স্কুল অফ বিজনেস এন্ড ইকোনমিক, সদস্য সচিব
কমিটিকে সাম্প্রতিক ঘটনা ও অস্থিতিশীলতার পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষ অধ্যয়ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সমস্ত প্রাসঙ্গিক প্রমাণ, অনুসন্ধান এবং বিবৃতি সহ সাত (৭) কার্যদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হল।’